বিএনপিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কহীন করার ষড়যন্ত্র

৩ মিনিটের অ্যাকশন : যেভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন রিয়াজ রহমান

মাত্র ৩ মিনিট সময় নেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে গুলি করা ও তার ব্যাক্তিগত গাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য। অত্যন্ত প্রশিক্ষিত আটজনের একটি দুর্বৃত্তদল মঙ্গলবার রাত ৮.৩৫ থেকে ৮-৪০ এর মধ্যে এই হামলা চালায়। রাজধানীর কূটনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত গুলশান-২ এ হোটেল ওয়েস্টিন ও বিলকিস টাওয়ারের পাশে ৪৩ নম্বর রোডে ঘটে ঘটনাটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ৩টি মোটরসাইকেলে করে আট জনের একটি দল কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এর পরপরই তারা রিয়াজ রহমানের পায়ে ও কোমরের কিছুটা পেছন দিকে ৪টি গুলি করে। পরে তার ব্যাক্তিগত গাড়িটিতেও আগুন দিয়ে নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

ঘটনাস্থলে থাকা বিদ্যুৎকর্মী টিটু দাস বলেন, ‘প্রথমেই তিনটি মোটরবাইকের একটি ওই গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। একজন একটি হাতুড়ির মতো দেখতে কিছু একটা দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভাঙে। এরপর কিছুক্ষণ গাড়ির ভেতরে থাকা একজনের সঙ্গে মোটরসাইকেল আরোহীদের কথা কাটাকাটি হয়। অল্পসময়ের মধ্যে গুলির শব্দ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ককটেল বিস্ফোরণ। এরপরই গাড়িতে আগুন। গুলিবিদ্ধ একজন গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে পার্শ্ববর্তী সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পুরো ঘটনাটি ঘটে যায় মাত্র তিন-চার মিনিটের মধ্যে।’reaz rahman car burning

নাশকতা কীভাবে ঘটলো সেব্যাপারে টিটু দাস বলেন, ‘ঘটনাটা এত দ্রুত ও ভয়ঙ্করভাবে ঘটে যে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি।’

এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ‘স্যার (রিয়াজ) সাড়ে সাতটার দিকে ম্যাডামের (খালেদা) সঙ্গে দেখা করতে যান। বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেননি। তাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি একেবারে ৮৬ নাম্বার রোডের মাথা পর্যন্ত আসি। এরপর তিনি বলেন, তুমি চলে যাও আমি একাই যাব। তার বারিধারা-বসুন্ধরায় বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। তার গাড়ি ছিল হোটেল ওয়েস্টিনের পাশের একটি রাস্তায়। এরপর তো মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে হামলার শিকার হন তিনি।’

 

বিএনপিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কহীন করার ষড়যন্ত্র

রিয়াজ রহমানের ওপর হামলাকে ‘বিএনপিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কহীন করার সরকারি প্রচেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী। মঙ্গলবার রাত সোয়া বারোটার দিকে  আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি যেসব গুলি রিয়াজ সাহেবের গায়ে লেগেছে, সেগুলো সাধারণ গুলি নয়। এগুলো সাধারণ সন্ত্রাসী বা দুর্বৃত্তদের কাছে সাধারণত থাকে না বা পাওয়া যায় না।’ ইনাম আহমেদ আরও বলেন, ‘গুলির যে ক্ষত দেখা গেছে, সেটি সাধারণ কোনও সিমটম না। এটা পরিস্কার, সরকার বিএনপিকে ভয় দেখাতেই এগুলো করছে। তাছাড়া মঙ্গলবার ১৪ দলের বৈঠক করে একজন নেতাও বলেছেন বুকে গুলি করা হবে। এর আগে শমসের মবিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি যেন আন্তর্জাতিকভাবে যোগাযোগহীন হয়ে পড়ে এ কারণেই পররাষ্ট্র বিষয়ক কাজে ব্যস্ত ব্যাক্তিদের টার্গেট করা হয়েছে। কী দোষ তার? তিনি তো ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেননি।’

উল্লেখ্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ রহমান বিএনপি-জোট সরকারের সময়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সময় তার ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছিলেন মেজর জেনারেল অব. খলিলুর রহমান। তিনি সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘পূর্বাপর-৭১: পাকিস্তানী সেনাগহ্বর থেকে দেখা’ গ্রন্থে রিয়াজ রহমানের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই