৩২৫ মানব পাচারকারীর তালিকা নিয়ে মাঠে যৌথ বাহিনী

থাইল্যন্ডের পাহাড়ি জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। এই অভিযানে শুধু গ্রেপ্তারই নয়, এরইমধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে চার মানব পাচারকারী। অভিযানে অংশ নিচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি। আর তাদের হাতে আছে ৩২৫ মানব পাচারকারীর নামের তালিকা।

চট্টগ্রাম, কক্সাবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাচারকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। চলমান অভিযানে মানব পাচারকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান রোববার বলেন, ‘মানব পাচারকারীদের তালিকা করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ৩২৫ জন মানব পাচারকারীর তালিকা রয়েছে তাদের হাতে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত চার জন এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে মানব পাচারকারীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডের ঘটনার পর কক্সবাজার এলাকায় গত ৩ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাত জন মানব পাচারকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে চার জন নিহত হয়েছে। বাকি তিনজন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, এই সময়ের মধ্যেও থেমে নেই মানব পাচারকারীরা। অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠানোর সময় গত তিন দিনে আসামিদের গ্রেপ্তারে পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে আরো পাঁচ জনকে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কক্সবাজারে আগে থেকেই মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। থাইল্যান্ডের ঘটনার পর যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৯৭ টি মামলা করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ১৯০ জনকে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৩ জনকে। অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় উদ্ধার করা হয়েছে ২৩৫ জনকে।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত কক্সবাজার এলাকায় চার জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। রোববার নিহত হয়েছে মো. জাফর আলম ওরফে জাফর মাঝি (৩৮) নামের এক মানবপাচারকারী। এর আগে গত ৮ মে নিহত হয়েছেন আরো তিনজন। তারা হলেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া এলাকার ধলু হোসেন (৪৫), কাটাবুনিয়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ও হারিয়ারখালী এলাকার জাফর আলম (৩৯)।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশে পাহাড়ি জঙ্গলে বন্দি শিবিরের খোঁজ পায় পুলিশ। গত ১ মে এক শিবিরে একটি গণকবর থেকে ২৬ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। এই বন্দিশিবিরে পাচার বা অপহরণের শিকার হওয়া পাঁচ শতাধিক অভিবাসীকে মেরে ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে বেঁচে যাওয়া একজনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। এসব বন্দির অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলেও এসব প্রতিবেদনে বলা হয়।

সূত্রটি জানায়, অবৈধভাবে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া পাঠানোর ব্যাপারে প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা সারা দেশ থেকে লোক জড়ো করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে উখিয়ার উপজেলায় আনে। এরপর ছোট ছোট নৌকায় করে সমুদ্রে জাহাজে তুলে নিয়ে যায়।
থাইল্যান্ডের শিবিরে আটকে রেখে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে মুক্তিপণ আদায় করা হতো বলে অভিযোগও পাওয়া গেছে।



মন্তব্য চালু নেই