৩০ বছর পর ঘুম ভাঙল!

বেশ কয়েক বছর আগে সন্ধান পাওয়া গেলে হয়তো সুকুমার রায়ের ‘খিচুড়ি’তে এদের স্থান হতো৷ হাফ মিলিমিটারেরও ছোট প্রাণীটি৷ গঠন শুঁয়োপোকার মতো হলেও মুখের সঙ্গে জলহস্তির অনেক মিল রয়েছে৷ ১৯৮৩ সালে আন্টার্কটিকা যাওয়ার পথে ছোট্ট এই প্রাণী, টার্ডিগ্রেডকে খুঁজে পেয়েছিলেন জাপানি গবেষকরা৷ তাদের বরফের বাক্সে ভরে নিয়ে এসেছিলেন জাপানে৷ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ল্যাবরেটরিতে প্রায়-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকার পর ২০১৪ সালে গবেষকদের শুশ্রূষায় সেই ছোট্ট প্রাণীগুলির মধ্যে দু’টি ফের জেগে উঠেছে৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।

প্রতিবেদনে জানা যায়, শুধু তাই নয়, তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা ডিম ফুটে ছানা টার্ডিগ্রেডও জন্মলাভ করেছে৷ আর তার সঙ্গেই উন্মোচিত হয়েছে অনেক রহস্য৷ সম্প্রতি ‘ক্রায়োবায়োলজি’ জার্নালে সেই গবেষণার কথাই লেখা হয়েছে৷ সুন্ত দু’টি টার্ডিগ্রেডকে ‘স্লিপিং বিউটি ১ ও ২’ নাম দিয়েছিলেন গবেষকরা৷ তবে, ‘ওয়াটার বেয়ার’ (জলের ভালুক) হিসেবেই এর পরিচিতি বেশি৷

ছোট্ট এই প্রাণীটির বিশেষত্ব, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে, যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে৷ হিমালয়ের শীর্ষ শৃঙ্গ হোক বা আন্টার্কটিকার বরফ ঢাকা এলাকা, গভীর সমুদ্রতল বা ধুলোমাখা রাস্তা সর্বত্রই এদের অবাধ বিচরণ৷ ক্ষুদ্র এই প্রাণীটিকে ধ্বংস করাও সহজ নয়৷ না খাইয়ে রেখে, হাতে দলে, পুড়িয়ে, রেডিয়েশনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কোনো ভাবেই টার্ডিগ্রেডকে মারতে সক্ষম হননি বৈজ্ঞানিকরা৷

গবেষকরা বলছেন, ইচ্ছেমতো নিজেদের ‘ক্রিপটোবায়োসিস’ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে টার্ডিগ্রেড, আর সেটাই তাদের দীর্ঘআয়ুর মূল রহস্য৷ এদের ছোট্ট শরীরের চারপাশে সব সময়ই পানির একটা আস্তরণ প্রয়োজন হয়৷ খুব শুকনো আবহাওয়ায় এদের শরীর ৯৭ শতাংশ আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে, আর তখন এদের দেহের আকার ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যায়৷ এই ‘ক্রিপটোবায়োটিক’ অবস্থায় প্রাণীটি যে কোনো পরিবেশেই বেঁচে থাকতে পারে৷ তাদের কোষ গরম, ঠান্ডা, তেজস্ক্রিয়তা সবকিছুরই প্রতিরোধক হয়ে ওঠে৷ এই অবস্থায় তারা প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে৷ প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে যথাযথ আর্দ্রতা পেলে টার্ডিগ্রেড ফের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে৷ জাপানি গবেষকদের নিয়ে আসা টার্ডিগ্রেডদের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল৷ সব মিলিয়ে টার্ডিগ্রেডের আয়ু প্রায় ৩১ বছর৷

তবে জাপানি গবেষকদের নিয়ে আসা ‘স্লিপিং বিউটি ২’ পূর্বাবস্থায় ফেরার পরও দু’সন্তাহের বেশি বাঁচেনি৷ তবে ‘স্লিপিং বিউটি ১’কে বেশ অনেক দিন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন তারা৷ তার ১৪টি ডিম ফুটে শিশু টার্ডিগ্রেডও জন্মেছে৷ তাদের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে টার্ডিগ্রেডের ডিএনএ ও কোষ বিভাজন রহস্যের বাহির করার চেষ্টা করছেন গবেষকরা৷

তবে, থেবড়া মুখের, আট পায়ের এই ছোট্ট প্রাণী নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের কাছে খুবই আদর পাচ্ছে৷ নিউ ইয়র্কের ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচেরাল হিস্ট্রি’ তো ইতিমধ্যে টার্ডিগ্রেডের একটা ১০ ফুটের প্রতিকৃতিও বানিয়ে ফেলেছে৷ এক কথায় হাঁসজারুর মতোই এই হিপোপোকা এক্কেবারে হিট!



মন্তব্য চালু নেই