২৮ প্রকারের হার্টের রিংয়ের দাম কমছে!

দেশের বাজারে বিক্রীত ২৮ প্রকারের হার্টের রিংয়ের (করোনারি স্ট্যান্ট) মার্কেটিং রিটেইল প্রাইজ (এমআরপি) নির্ধারণ করে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। ফলে এখন থেকে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বাধ্যতামূলকভাবে এমআরপি মূল্যে রোগীদের কাছে রিং বিক্রি করতে হবে।
ক্রেতাদের সুবিধার্থে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো যত দ্রুত সম্ভব বিভিন্ন সাইজের হার্টের রিংয়ের প্যাকেটের গায়ে ড্রাগ রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও এমআরপি’র সিল মারবে।
জানা গেছে, গত বুধবার ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২৮ প্রকারের হার্টের রিং`র এমআরপি নির্ধারণ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও বেশ কয়েক প্রকারের হার্টের রিং`র এমআরপি নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা পড়ে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণের ফলে রিং ভেদে ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কমে যাবে। ফলে নামিদামি হাসপাতালের গলাকাটা বাণিজ্য বন্ধ হবে।
সারাদেশে মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও কার্যকরী করোনারি স্ট্যান্ট অর্থাৎ হার্টের রিংয়ের মূল্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে গত ১১ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর একটি সভা ডাকেন।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ট আমদানিকারক, ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের মালিক-প্রতিনিধি, কর্মরত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, বিএমএ ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সভায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের রিংয়ের দামের পার্থক্যের বিষয়টি উঠে আসে। সভায় একাধিক বক্তা জানান, বর্তমানে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য উন্নত দেশে ৭০০-৮০০ ডলার/ইউরোর বেশি স্ট্যান্টের দাম নেই।
অথচ দেশের কোনো কোনো হাসপাতালে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকায়ও স্ট্যান্ট বিক্রি হচ্ছে। হাসপাতাল ভেদে একই কোম্পানির রিংয়ের মূল্যে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকারও দামের পার্থক্যে রয়েছে বলে বক্তব্য উঠে আসে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্ট্যান্টের মূল্য নির্ধারণ করা আছে বলে তথ্য দেন বক্তারা।
বৈঠক শেষে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক ও সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে সদস্য সচিব করে ১৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদনপ্রাপ্ত ২১টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৪৭ প্রকারের বিভিন্ন ধরনের স্ট্যান্ট আমদানি করেছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কত মূল্যে আমদানি করছে সে তথ্য এবং স্বপ্রণোদিত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে স্ট্যান্ট সরবরাহের প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪টি কোম্পানি বেয়ার মেটাল স্ট্যান্ট ২৫ হাজার টাকা ও ড্রাগ ইলিওটিং স্ট্যান্ট ৫০ হাজার টাকায় বিক্রির প্রস্তাবনা দেয় বলে জানান তিনি।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব আমদানিকারককে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকে যুক্তিসঙ্গত দাম নির্ধারণ করে সে দামে স্ট্যান্ট বিক্রির পাশাপাশি প্যাকেটের গায়ে ডিআর নম্বর ও দাম উল্লেখ করতে হবে বলে জানান তিনি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে সভা চলাকালীন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ৩টি রিং সরবরাহকারী কোম্পানি রিং সরবরাহ বন্ধ রাখে। এ বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি সভায় উষ্মা প্রকাশ করে।ওই দিনই আলোচনাক্রমে ২৮ প্রকারের স্ট্যান্টের এমআরপি নির্ধারণ করা হয়।
মূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য সচিব মো. সালাহ উদ্দিন শুক্রবার সকালে জানান, জীবন রক্ষাকারী এ করোনারি স্ট্যান্ট আমদানি করতে ট্যাক্স লাগে না। তাই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ টাকায় কোনো পণ্য আনলে সেগুলো ১ দশমিক ৫ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারবে। এর বেশি টাকা নেয়া যাবে না। এভাবেই ২৮ প্রকারের বিভিন্ন ধরনের স্ট্যান্টের দাম নির্ধারণ করা হয়। ফলে আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে ক্রেতারা হার্টের রিং কিনতে পারবেন।
কোন হার্টের রিংয়ের দাম কত কমবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য নেই। কত টাকায় আমদানি হয়েছে তার ওপর মূল্য নির্ধারিত হবে। তবে বর্তমান মূল্য আগের চেয়ে কম হবে।
মন্তব্য চালু নেই