২৬০০ কোটি টাকায় প্রাণ পাচ্ছে ৩০ বছর পুরনো কেন্দ্র
ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের বয়স হয়েছে প্রায় তিরিশ বছর। এতো পুরোনো বলে কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা যেমন কমে গেছে তেমনি জ্বালানি ব্যয়ও বেড়েছে। কারণ এসব কেন্দ্রের অর্থনৈতিক বয়স হয় সাধারণত বিশ বছর। এবার সংস্কারের মাধ্যমে এ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১৭০ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে হবে ৪১৬ মেগাওয়াট। এতে ব্যয় হবে দুই হাজার কোটি টাকা ।
এ অর্থ ঋণ হিসেবে দেবে এইচএসবিসি ব্যাংক (দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন)। সুদ ও অন্যান্য চার্জসহ ব্যাংকটিকে ফেরত দিতে হবে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সুদের হার হবে ২.৮২ শতাংশ। তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (তিন বছর কোনো সুদ দিতে হবে না) ঋণটি ১০ বছরে শোধ করতে হবে।
এই অর্থায়নের বিষয়ে এইচএসবিসি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) । সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে ২ হাজার ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এটা হবে দেশের প্রথম রিপাওয়ারিং কার্যক্রম ।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক অলস্টম এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) যৌথ কনসোর্টিয়াম। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। ঠিকাদার নির্বাচনের দীর্ঘদিন পর ঋণ চুক্তি হলো।
পিডিবির তথ্য মতে, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিটটি ১৯৮৬ সালে স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এ ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ১৭০ মেগাওয়াট। এ জন্য প্রতিদিন ৬ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। রিপাওয়ারিং হলে একই পরিমাণ জ্বালানি দিয়ে ৪১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
রিপাওয়ারিং হলে সিম্পল সাইকেলের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৬০ মেগাওয়াট । আর কম্বাইন্ড সাইকেলে উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৪১৬ দশমিক। এ কেন্দ্রের চার নম্বর ইউনিটও রিপাওয়ারিং করা হবে।
কম্বাইন্ড সাইকেল হলো প্রথমে (সিম্পল সাইকেল) বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা দিয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এতে বাড়তি গ্যাস পুড়তে হয় না।
সোমবার অর্থায়ন চুক্তিতে পিডিবির পক্ষে প্রতিষ্ঠানের সচিব জহিরুল হক এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রপ্তানি অর্থায়নের আঞ্চলিক প্রধান আর্নোড ক্যাচার্ড চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান মন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমরা আজ নতুন একটি কাজ শুরু করছি। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের নতুন দিক উন্মোচিত হবে।
তিনি বলেন, আগে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নে সরকারের উপর নির্ভর করতে হতো এখন আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। ঠিকাদাররাই অর্থের ব্যবস্থা করছে। আমরা দেশে ও বিদেশের শেয়ারবাজার থেকেও অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, সময় মতো ঋণের অর্থ ফেরত দেয়ায় বিদ্যুৎখাতে অনেকেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের মূল্যও সঠিক সময়ে পরিশোধ করছি।
সচিব জানান, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চার নম্বর ইউনিটের রিপাওয়ারিংয়ের বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি।
অনুষ্ঠানে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মসুল হাসান মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট খাতের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই