২৩ নভেম্বরের মধ্যে রামপাল চুক্তি বাতিলের আল্টিমেটাম
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন চুক্তি ২৩ নভেম্বরের মধ্যে বাতিলের আল্টিমেটাম দিয়েছে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। কেন্দ্রী শহীদ মিনারে শনিবার আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
২৩ নভেম্বরের মধ্যে রামপাল চুক্তি বাতিল না করা হলে ২৪ নভেম্বর ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি ও ২৬ নভেম্বর মহা সমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।
‘রামপাল চুক্তি ছুড়ে ফেল, সুন্দরবন রক্ষা কর’ সুন্দরবনবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিলসহ ৭ দফা দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে নতুন এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির মাধ্যমে যেটা হতে যাচ্ছে সেটা করার পর আমরা দেখতে পারছি সারাদেশের এমনকি বিদেশি বিভিন্ন মুনাফাখোর গোষ্ঠী, বিভিন্ন ভূমিখোর গোষ্ঠী, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি উন্নয়নের নামে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে শকুনের মত সুন্দরবনের চারিদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই সুন্দরবন না থাকলে তাদের কোনো ক্ষতি নেই, উদ্বেগ নাই। তাদের কাছে বনের কোনো আর্থিক মূল্য নেই, তাদের কাছে জমির আর্থিক মূল্য শত হাজার কোটি টাকা। তাদের কাছে নদীর কোনো আর্থিক মূল্য নাই কিন্তু নদী যদি ভরাট হয় তাহলে সেই জমির মূল্য শত হাজার কোটি টাকা। তারা টাকার জন্যে এমন উন্মাদ যে এই দেশের ভবিষ্যৎ তছনছ করতে তাদের কোনো দ্বিধা নেই। কারণ তারা এই দেশকে তাদের বাসভূমি মনে করে না। তারা মনে করে এই দেশ মুনাফার জন্যে, এই দেশ টাকা বানানোর জন্যে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বলা হয় উপকারীকে বাঘে খায়। সুন্দরবন কতভাবে আমাদের উপকার করে তা ব্যাখ্যা করা যাবে না, তা অনুভব করতে হয়। সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচায়। এখানে যে জীববৈচিত্র আছে তা হারিয়ে গেলে তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই সুন্দরবনকে বাঘে খাচ্ছে। আসলে বাঘে খাচ্ছে না খাচ্ছে একটি দানব। সেই দানব সুন্দরবনকে খাবে এবং এর মধ্যের বাঘকে খাবে। এই দানব হচ্ছে পুঁজিবাদী লালসা, পুঁজিবাদী শোষণ।’
তিনি আরো বলেন, ‘বলা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে আমাদের অনেক উপকার হবে। আমাদের এত উপকার হবে তাহলে ভারত কেন তাদের এলাকায় এটি স্থাপন করে না? তারা কেন আমাদের ওপর এটি চাপিয়ে দিচ্ছে। সুন্দরবনকে রক্ষা করার যে যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আসলে জীবন মরণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ পরাজিত হলে আরো জায়গায় পরাজিত হবে। এই বন ধ্বংস হয়ে গেলে বাংলাদেশের সকল বন আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে যাবে।’
কর্মসূচিতে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ১৬ শত মানুষ এই প্রকল্পের পক্ষে রয়েছে। এরমধ্যে আবার ৮ শত মানুষ প্রকল্প ও এর কাজের সঙ্গে জড়িত। এই ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষ প্রতারণা করছে। সুন্দরবনের পশুপাখিরা যদি কথা বলতে পারতো তাহলে তারাও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত।’
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশ আজ গভীর সংকটের মুখে পতিত হয়েছে। সমস্যার কোনো শেষ নেই। সরকার ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে চুক্তি করেছে এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।’
কর্মসূচি ঘোষণা শেষে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশের মাধ্যমে আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই জনবিরোধী কোনো কাজ করলে আপনাদের গদি নড়বড়ে হয়ে যাবে। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’
অবস্থান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বাসদ, নাগরিক ঐক্য, সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন। এতে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, ভাস্কর রাসা, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই