২১৬ কোটি টাকা পাচার : অভিযুক্ত চারজনকে দুদকে তলব

পণ্য আমদানির নামে দুবাইয়ে প্রায় ২১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মেসার্স ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানির মালিকসহ অভিযুক্ত চারজনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক দেবব্রত মণ্ডল স্বাক্ষরিত নোটিশে তাদের আগামী ২২ নভেম্বর সকালে দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন মেসার্স ফয়েজদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. রফিকউদ্দিন স্বপন ওরফে মো. রাফি এবং ওই কোম্পানির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ফয়েজ উদ্দিন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও তানভীর ইন্টারন্যাশনালের এর কর্ণধার ও মো. রফিকউদ্দিনের তিন ভাই নাসির উদ্দিন বাবুল, ফিরোজ উদ্দিন খোকন ও নাফিজ উদ্দিন তুহিন।

এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, মেসার্স ফয়েজদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. রফিকউদ্দিন পণ্য আমদানির জন্য যে এলসি খুলেছেন ওই এলসির গ্রান্টার হলেন নাসির উদ্দিন বাবুল, ফিরোজ উদ্দিন খোকন ও নাফিজ উদ্দিন তুহিন। মূলত সে কারণেই দুদক তাদেরকেও তলব করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, দুবাইভিত্তিক কোম্পানি মোহসেন আল ব্রাইকি জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশি নাগরিক আবুল আহসান চৌধুরী। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য আমদানির নামে তিন ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খোলে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার রাসায়নিক পণ্য ও খাদ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানি। কিন্তু পণ্য আসেনি। অথচ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২১৬ কোটি টাকা। আর পণ্য আমদানির নামে দুবাইয়ে অর্থ পাচারের এ প্রমাণ মিলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন অনুযায়ী, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বেগম রোকেয়া সরণি শাখায় ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানির নামে ২০১১ সালের ৭ জুন হিসাব খোলা হয়। অনুরূপভাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখায় হিসাব খোলা হয় ২০০৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ও ঢাকা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় ২০১২ সালের ১২ আগস্ট। হিসাব খোলার পর লেনদেনের পাশাপাশি বাকিতে ঋণপত্রও খোলে ব্যাংক তিনটি।

দুবাইয়ের মোহসেন আল ব্রাইকি জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানির জন্য সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খোলা হলেও ৩৩টি ঋণপত্রের মধ্যে ১৮টির বিল অব এন্ট্রির সত্যতা ছিল না। এ ছাড়া ছয়টি ঋণপত্রের প্রকৃত নথি গ্রহণ না করায় পণ্য আমদানি হয়নি। অর্থাৎ পণ্য আমদানি না করেই ২৪টি ঋণপত্রের বিপরীতে ৯৬ লাখ ডলার দুবাইয়ে পাঠিয়ে দেয় মেসার্স ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানি।

এ ছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখায় খোলা হয় ৫৮টি ঋণপত্র। তবে ১১টির প্রকৃত নথি ও ৩৩টির বিল অব এন্ট্রির সঠিকতা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ কোনো পণ্যই আমদানি হয়নি। তার পরও বিদেশে পাঠানো হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

সূত্র আরো জানায়, ঢাকা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় দুবাইয়ের ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হলেও পণ্য আসেনি। অথচ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ১২ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে পণ্য না এনেই তিন ব্যাংকের মাধ্যমে ৭১টি ঋণপত্রের বিপরীতে বিদেশে পাঠানো হয়েছে ২ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।

মোহসেন আল ব্রাইকি জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক আবুল আহসান চৌধুরী। তার পাসপোর্ট নম্বর কিউ০৪৬৯৬২৭। বাকি ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহসেন আওয়াদ ওমর সালেহ আল ব্রাইকি। অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে খাদ্য, খেলনা, কসমেটিক ও কেমিক্যাল পণ্য আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি। আর রপ্তানি করে সৌদি আরব, বাংলাদেশ, ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশে। ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানির অন্যতম গ্রাহক। দুবাইভিত্তিক এ মোহসেন আল ব্রাইকি জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানির কাছেই পাঠানো হয়েছে ২ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এ ছাড়া আরো তিন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে গেছে ৬ লাখ ডলার।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই