২০ লাখ কর্মী যাচ্ছে, কেন এই ভূয়া সংবাদ ?

“বাংলাদেশ ইজ রেডি টু সেন্ড টু মিলিয়ন ট্রেইন্ড ওয়ার্কার্স” – জেদ্দা ভিত্তিক আরব নিউজে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সংবাদের প্রথম বাক্যটি এমন হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিরোনাম করা হয় “ঢাকা টু সাপ্লাই টু মিলিয়ন ওয়ার্কার্স”। ভূয়া নিউজের ‘হট-কেক’ তৈরীর উপকরণ যোগান দেয়া হয় ঠিক এখান থেকেই। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তরফ থেকে ‘গাছে কাঠাঁল গোঁফে তেল’ স্টাইলে আরব নিউজে এদিন যেভাবে এই সংবাদটি প্রকাশ করানো হয়েছে, তাতে একদিকে যেমন মূল সত্যকে আড়াল করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, অন্যদিকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ঐ সংবাদকে বুঝে-না বুঝে মনগড়া অনুবাদ করে কাল্পনিক নিউজ দিয়েছে বাংলাদেশের বেশ ক’টি সংবাদ মাধ্যম।

বাংলাদেশ থেকে কোন্ কোন্ পেশায় কি কি কন্ডিশনে কত পরিমান কর্মী সৌদি আরবে কাজ করার সুযোগ পাবে – এতদসংক্রান্ত কোন কিছুই যেখানে প্রাথমিকভাবেও নির্ধারণ করেনি সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয়, অথচ আরব নিউজে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রচার করানো কনস্যুলেটের ‘প্রেস রিলিজ’ টাইপের একটি নিউজের উপর ভিত্তি করে ‘যাচ্ছেতাই’ বিভ্রান্তিকর তথা শতভাগ ভূয়া নিউজ প্রকাশিত হয়েছে একাধিক বাংলা সংবাদ মাধ্যমে। “সৌদিতে যাচ্ছে ২০ লাখ কর্মী” – “সৌদি আরবে ২০ লাখ কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ” – আরো কতকি আজগুবি শিরোনাম ! “প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ লাখ কর্মী নিতে চায় সৌদি সরকার” – এমন বানোয়াট তথ্যকেও ‘সুখকর সংবাদ’ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে।

রাজধানী রিয়াদ, বন্দরনগরী জেদ্দা, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দাম্মাম এবং দুই পবিত্র নগরী মক্কা-মদীনা সহ বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মাঝে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ২০ লাখ কর্মী সংক্রান্ত এই ভিত্তিহীন সংবাদে। সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, ‘ট্রেইন্ড ওয়ার্কার্স’ তথা প্রশিক্ষিত ‘দক্ষ জনশক্তি’ যোগান দিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত বা ‘রেডি’ তা আসন্ন সফরে সরেজমিনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে দেখবে সৌদি সরকারী প্রতিনিধি দল। সৌদি সরকার যেখানে তার দেশে অদক্ষ জনশক্তির আধিক্য নিয়ে সাম্প্রতিককালে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেখানে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সৌজন্যে আরব নিউজ পত্রিকায় ‘ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে’ প্রচার করা নিউজটিকে ততোটা ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছে না সৌদি প্রশাসন।

প্রথমতঃ সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয় খুব ভালো করেই জানে, যেসব বাংলাদেশীরা বছরের পর বছর দেশটিতে কাজ করছেন তাদের শতকরা কতভাগ ‘ট্রেইন্ড’ বা দক্ষ-প্রশিক্ষিত। চলমান অবস্থা এবং নতুন সৌদি শ্রম আইন – সব কিছুকে আমলে নিয়েই ঢাকায় কাজ করবে প্রতিনিধি দলটি। এদিকে বাংলাদেশীরা ভবিষ্যতে আর কখনো অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত হবে না – বাংলাদেশের শ্রমমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে ততোটা সন্তুষ্ট হতে পারেনি সৌদি প্রশাসন। কারণ তারা খুব ভালো করেই জানে যে, দেশটিতে বসবাসরত লাখ লাখ বাংলাদেশীদের ‘সামান্য সেবা’ দিতেই যেখানে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসকে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে গোটা দেশ জুড়ে লোকজন কোথায় কি ‘ক্রাইম’ করছে তা দেখভাল করা দূতাবাসের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে না।

মূলতঃ ক্রাইমের কারণেই টানা ৭ বছর যে দেশের নাম ছিল সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয়ের ব্ল্যাকলিস্টে, সেই বাংলাদেশের নতুন কর্মীরা সৌদি আরবের মাটিতে কোন প্রকার অপরাধ করবে কি করবে না, তার ন্যূনতম নিশ্চয়তা দেবার ‘যৌক্তিক’ সুযোগ নেই বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী বা মন্ত্রনালয়ের – এ বিষয়টিও সম্যক অবগত সৌদি প্রশাসন। সব মিলিয়ে দেশটির সরকারী প্রতিনিধি দলের আসন্ন ঢাকা সফরের আগে চূড়ান্ত হচ্ছে না কোন্ সেক্টরে কত কর্মীর যে কোন পরিসংখ্যান। ঢাকা সফরে সৌদি বিশেষজ্ঞরা তাদের চাহিদা ও কন্ডিশনের আলোকে শতভাগ সিদ্ধান্ত নেবেন এই ইস্যুতে। সৌদি সরকার যেহেতু তাদের দেশের প্রয়োজনেই বাংলাদেশের প্রতি ‘সুনজর’ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই ‘সেনসেটিভ’ এই সময়ে বানোয়াট সংবাদ প্রচার না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।



মন্তব্য চালু নেই