১৭ সেকেন্ডে মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা! (ভিডিও)
পুরো ঘটনাটির জন্য সময় নেয়া হয়েছে ৫০ সেকেন্ড। এর মধ্যে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা অাক্তার মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাত্র ১৭ সেকেন্ড সময় নিয়েছে ঘাতকরা। মোটর সাইকেল নিয়ে আগেই দাঁড়িয়ে ছিলো দুই হামলাকারী, অপরজন মিতুকে অনুসরণ করেছেন পেছন থেকে। জিইসি মোড়সংলগ্ন মিষ্টির দোকান ওয়েল ফুডের সামনে পৌঁছার সাথে সাথে মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রথমে ছুরি মারে এবং পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় ঘাতকরা। এসময় মিতুর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো তার পাঁচ বছরের শিশু সন্তান।
নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যার এ দৃশ্য ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘড়ির কাটায় তখন কাঁটায় কাঁটায় ৬টা ৩২ মিনিট। এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা অাক্তার মিতু তার সন্তান মাহিরের হাত ধরে গলির মুখে এসে পৌঁছান। ঠিক এর ১৫ সেকেন্ড পর বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা এক যুবক মোবাইলে কথা বলতে বলেতে তাকে অনুসরণ করে পেছন পেছন হাঁটতে থাকেন।
৬টা ৩২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে তিনি ওয়েল ফুডের সামনে পৌঁছানোর সাথে ১ সেকেন্ডের ব্যবধানে পেছন থেকে দৌঁড়ে মিতুর দিকে এগিয়ে যায়। ঠিক একই সময়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকা দুই যুবক তার উপর হামলা করে। হামলা শুরু এবং শেষ করে মোটরসাইকেলে উঠতে ঘাতকরা সময় নিয়েছে মাত্র ১৭ সেকেন্ড! এর মধ্যে মাহমুদা অাক্তার মিতুর শরীরে করা হয়েছে ৮টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও দুটি গুলি।
৬টা ৩৩ মিনিট ০৫ সেকেন্ডে খুনিরা কিলিং মিশন শেষ করে মোটরসাইকেলে চেপে বসে। তবে মোটরসাইকেলটি চালু হতে সময় নেয় ১৯ সেকেন্ড। ৬টা ৩৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে তিন খুনি মোটর সাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। যে মোটর সাইকেল চালাচ্ছিল তাকে হেলমেট পরিহিত দেখা গেছে। পুরো ঘটনায় সময় লেগেছে মাত্র ৫০ সেকেন্ড।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, হত্যার ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা আগে থেকেই ঘটনাস্থল রেকি করেছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে বাসা থেকে বের হয়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে কখন আসবেন, তা নিশ্চয় দুর্বৃত্তরা আগে থেকে খোঁজখবর রাখছিল। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী তাঁর ছেলে মাহমুদ আকতার মাহিরকে নিয়ে জিইসি মোড় পৌঁছার আগেই ওয়েল ফুড নামক দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে করে তিন আরোহী আসে। যে গাড়ি চালাচ্ছিল, তার মাথায় হেলমেট ছিল। বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫। তার পেছনে দুজন বসা ছিল। মাঝখানে বসা যুবকের হাতে ছুরি ছিল। পেছনে বসা তৃতীয়জনের হাতে একটি পিস্তল ছিল।
তিনি আরো বলেন, মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবক প্রথমে মাহমুদা খানমকে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাঝখানে থাকা যুবক প্রথমে তাঁর বুকে, হাতে ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। তৃতীয়জন তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে। প্রথম ফায়ারটি মিস হয়। দ্বিতীয় ফায়ারে বাবুল আক্তারের স্ত্রীর কপালের বাঁ পাশে গিয়ে লাগে। সবকিছু করতে ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ড লাগে।
উপকমিশনার পরিতোষ ঘোষ বলেন, ‘ওয়েল ফুডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ একেবারে অস্পষ্ট। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়েরগুলোতে দেখা যাচ্ছে। সব ফুটেজ সংগ্রহ করে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
রোববার দুপুরে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. কবির জানান, মাহমুদা খানম মিতুর শরীরে ১০টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাহমুদার মাথার বাঁ পাশে গুলির আঘাত পাওয়া গেছে। এছাড়া মাথার ডান পাশে পাওয়া গেছে ইটের আঘাত। ইটের আঘাতটি হয়তো মাটিতে পড়ে যাওয়ার সময় পেয়েছেন। এছাড়া বুকে, পিঠে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আটটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে পিটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির মতো হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে অব্যবহৃত তিনটি বুলেট উদ্ধার করা হয়। এগুলো ৭.৬৫ বোর পিস্তলের গুলি হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা খুব কাছ থেকে গুলি করেছে।’
রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যা করে দৃর্বৃত্তরা। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। অতি সম্প্রতি বাবুল আক্তারের পদোন্নতির পর ঢাকায় অবস্থান করলেও তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্য চালু নেই