১৭ বছর ধরে কবরে বসবাস করছেন জীবন্ত বৃদ্ধা

এটা সবার জানা কবর মৃত মানুষের জন্য। যদি বলা হয় যে কবরে জলজ্যান্ত মানুষও বসবাস করে তাহলে কেমন বিস্ময়কর হবে ব্যাপারটা! আর সেটি যদি হয় বাংলাদেশে তবে তা নিয়ে সবার মাঝেই কৌতূহল জাগে।

বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও সত্য। কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ঘরের ভেতর উঁচু কবর তৈরি করে সেখানে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বসবাস করছেন চানবি খাতুন নামের ৯০ বছরের এক বৃদ্ধা।

পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনের ফলে তার কবরটি রক্ষার জন্য তিনি লোকজনকে অনুরোধ জানালে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

তার এই সংবাদে এলাকাজুড়ে দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ওই বাড়িতে এসে ভিড় জমিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বন্দবের ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামে। বৃদ্ধা চানবি খাতুন ওই গ্রামের মৃত হাতেম আলীর স্ত্রী।

চানবি খাতুনের ছেলে চান মিয়া জানান, তার বাবা হাতেম আলী ৪০ বছর আগে মারা যান। এরপর থেকে চিশতিয়া (বাবা

নিজামউদ্দিন আউলিয়া) তরিকায় যোগ দেন তার মা। দিনরাত ইবাদত করাই তার কাজ। এই তরিকার মানুষদের নাকি গোপনে ইবাদত করতে হয়। এজন্য ঘরের ভেতর কবর তৈরি করে সেখানে বসবাস শুরু করেন তিনি। ধর্মের প্রতি মায়ের অনুরাগ দেখে ছেলে চান মিয়া ২০০০ সালে কবরটি পাকা করে দেন।

এ বিষয়ে বড় মেয়ে তারাবানু বলেন, আমার মা কবরে থাকে। বাইরের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে না। তিনি প্রতিদিন মধ্য রাতে কবর থেকে বের হয়ে পাশের নদীর পাড়ে যান। সেখানে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে নদী যেন তার কবর না ভাঙে সে দোয়া করেন। আমার মা কোনো ধরনের ঝাড়-ফুঁক করে না। শুধু বছরে একবার শিরনি দেন। মা দিনে ও সন্ধ্যায় দুটি করে রুটি খান।

স্থানীয় বাঘমারা গ্রামের লালচান শিকদার বলেন, আমার চাচি ১৭ বছর ধরে কবরের মধ্যে থাকছেন। দুনিয়ার কোনো কিছুর প্রতি কোনো লোভ নেই তার।

গত দু-তিন বছর থেকে নদীভাঙা নিয়ে চাচি চিন্তিত ছিলেন। এজন্য প্রতি বছর শিরনি দেন। কবরে থাকার বিষয়টি আত্মীয়স্বজনদের জানা থাকলেও চাচির নির্দেশের কারণে কাউকেও জানানো হয়নি।

লালচান শিকদার বলেন, এ বছর শিরনি দেয়ার সময় চাচি সবাইকে ডেকে বললেন, ‘তোমরা আমার কবরের কথা শেখের বেটিকে (শেখ হাসিনা) জানাইও। তিনি যেন আমার কবরটা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করেন।’ এটাই চাচির শেষ ইচ্ছা।

এ বিষয়ে বৃদ্ধা চানবি খাতুন বলেন, ‘আমি কবরের ভেতরে ১৭ বছর থেইক্যা বাস করি। আমি কবরের ভেতরে মরলে আমাকে কেউ বাহির করিও না। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই-ই। তোমরা শেখের বেটিকে বলিও, শেখ হাসিনা সরকার যেন নদীর ভাঙা রোধ করে। আমার কবর যেন নদীতে ভাঙিয়া না যায়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন বলেন, বিষয়টি গতকাল শুনেছি। আগে থেকে কিছু জানতাম না। শুনেছি তরিকাপন্থী লোক গোপনে ইবাদত করে। তাই হয়তো চানবি খাতুনও ওই তরিকা অনুযায়ী চলে।

এ ব্যাপারে বেসরকারি সংগঠন সিএডিকের নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ বলেন, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ কবরের ভেতরে বসবাস করতে পারে বলে জানা নেই। আর তিনি অন্ধকার কবরে দীর্ঘ ১৭ বছর থেকে বসবাস করছেন। আমরা বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছি।



মন্তব্য চালু নেই