১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ

চলতি বছর ১৬ ডিসেম্বর, জাতীয় বিজয় দিবসে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এর লক্ষ্য অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ ৬৫ ভাগ ও উৎক্ষেপণ কাজের রকেট নির্মাণের কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উদ্বোধনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তিনটি পর্যায়ে স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের কাজ হচ্ছে আমেরিকার ফ্লোরিডায়। সেখানে স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ ৬৫ ভাগ কাজ শেষ।
তিনি আরও জানান, রকেট তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে, যার ৬০ ভাগ কাজ শেষ। গাজীপুরে আরেক পর্বের কাজ হচ্ছে। সেটিরও ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
আসছে ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা যাবে কি না জানতে চাইলে ড. মাহমুদ বলেন, ‘আমার আশা করছি, বাকি সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারব এবং ১৬ ডিসেম্বরেই এটি উদ্বোধন করতে পারব’।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছে বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্স ও ফ্যালকন ৯ উৎক্ষেপণযান ব্যবহার করে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড থেকে ডিসেম্বরে এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে। ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইটটি বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এ স্লট। এখানেই মহাকাশে ঘুরে ঘুরে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশকে সেবা দিয়ে যাবে।
চুক্তি অনুসারে প্রাথমিকভাবে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল স্লট কেনা হয়েছে। তবে ১৫ বছর করে আরও দুবার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। স্যাটেলাইটের মূল অংশ তৈরি, উৎক্ষেপণ, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ ও বিমার কাজ চলছে।
উৎক্ষেপিত হওয়ার পর বাংলাদেশকে চল্লিশ ধরনের সেবা দেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। দেশের ইতিহাসের প্রথম এই স্যাটেলাইটের সহায়তায় দেশের টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক গোলাম রাজ্জাক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, উৎক্ষেপণের পর ‘ট্রান্সপন্ডার লিজের’ মাধ্যমে বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে এবং ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে বিনিয়োগের অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।
বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন এর কাছে আবেদন জমা দেয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার নয় শ উনসত্তর কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ইতোমধ্যেই ৫৫ শতাংশ সম্পাদিত হয়েছে। গাজীপুর এবং বেতবুনিয়াতে স্যাটেলাইটের দুটি ভু-নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। ভু-নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলে সূত্র জানায়।
নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপিত হওয়ার পরে বদলে যাবে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটলাইটের মাধ্যমে টেলিফোন সংযোগ নেওয়া যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য পেতে এখন অন্য দেশের মালিকানাধীন স্যাটেলাইট প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় এর সম্ভাবনা থাকলে নিজ সামর্থ্যেই বাংলাদেশ আগাম সতর্কতা জারি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে।
দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কাজে বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে থাকে। এ জন্য বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
এর পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-গবেষণা, ই-লার্নিং, ভিডিও কনফারেন্সিংসহ তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটবে। স্যাটেলাইটটির বাড়তি ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে।
মন্তব্য চালু নেই