১৫ মহাতারকা ব্যালন ডি’অর জেতেননি
আগামী ১২ জানুয়ারি জুরিখের আলো ঝলমলে সন্ধ্যায় বিশ্ব ফুটবলের সেরা ফুটবলারের খেতাব ফিফা ব্যালন ডি’অর ঘোষণা করা হবে। ইউরোপের ডন হিসেবে কে নির্বাচিত হবেন এবার? টানা চারবারের খেতাবজয়ী লিওনেল মেসি, রিয়াল মাদ্রিদের হটসেশন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নাকি বিশ্বজয়ী জার্মান দলের সদস্য ম্যানুয়েল ন্যুয়ার? তা না হয় সময়ের গর্ভেই ছেড়ে দিন। বরং আসুন জেনে নেই বিশ্ব ফুটবলের ১৫ মহাতারকার নাম, যারা ফুটবলকে তাদের নৈপূণ্য ও কীর্তিতে আলোকিত করেও কোনোদিনই ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব অর্থাৎ, ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি।
পেলে ও ম্যারাডোনা:
ব্রাজিলের পেলে কিংবা আর্জেন্টিনার ডিয়াগো ম্যারাডোনা কেউ ব্যালন ডি’অর জেতার সৌভাগ্য লাভ করেননি। কারণ, দুভাগ্যজনকভাবে বর্ষসেরা ফুটবলারের এই খেতাবটির প্রবর্তন হয় ১৯৯১ সালে। তার আগেই কিনা লাতিন আমেরিকার দুই কিংবদন্তি অতীত হয়ে গেছেন প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে। প্রাথমিকভাবে ব্যালন ডি অর কেবলমাত্র ইউরোপে খেলা ইউরোপিয়ান ফুটবলারদের ব্যক্তিগত পুরস্কার ছিল। ১৯৯৫ সালে ইউরো খেলা সব ফুটবলারের জন্য এটা উন্মূক্ত করা হয়। কিন্তু ২০১০ সালে এসে ফিফা প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার ও ব্যালন ডি অর একীভূত হয়ে যায়। পুরস্কারটি হয়ে ওঠে বিশ্বজনীন।
পাওলো মালদিনি:
১৯৯৪ সালের ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের দৌঁড়ে তৃতীয় হয়েছিলেন পাওলো মালদিনি। এর পরের বছর ফিফা প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার নির্বাচনে ভোটাভুটিতে দ্বিতীয় হয়েছিলেন এসি মিলানের ইতালিয়ান কিংবদন্তি। যিনি সান সিরোর জায়ান্টদের হয়ে সাতটি সিরি আ খেতাব জেতেন। বায়ার্ন মিউনিখ ও লিভারপুলের সমান তার ঝুঁলিতে আছে পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপও। যা কিনা বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের থেকে বেশি।
রাউল গঞ্জালেস:
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি মৌসুমের আগ পর্যন্ত কুলীন ফুটবল আসরটির সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। যিনি লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে গোলের পর গোল করে গেছেন। শুধু তাই নয়, রাউলের রেকর্ড সংখ্যক গোলেই রিয়াল ছয়টি লা লিগা খেতাব ও তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জিতেছে। কিন্তু তারপরও কখনো ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের ট্রফি জিততে পারেননি রাউল। ২০০১ সালে অবশ্য মাইকেল ওয়েনের পেছনে দ্বিতীয় সেরা হয়েছিলেন। তিন বছর বাদে সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে যে ওয়েন তার সতীর্থ হয়েছিল।
থিয়েরে অরি:
২০০৩ সালে দ্বিতীয় আর ২০০৬ সালে তৃতীয় সাফল্য বলতে এটুকুুই। নিজের বনাঢ্য ক্যারিয়ারে কখনো ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি ফ্রান্সের আর্সেনাল কিংবদন্তি থিয়েরে হেনরি অরি। অথচ ক্লাব ও জাতীয় দলে হয়ে সাফল্যের চূড়ায় উঠেছিলেন ব্লুজ ফরোয়ার্ড। এক্ষেত্রে দুটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি, দুটি লা লিগা শিরোপা, একটি বিশ্বকাপ, একটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নসশিপ এবং আর্সেনালের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া অরিকে নিশ্চয়ই সান্ত্বনা দিতে পারবে না।
জাভি হার্নান্দেজ:
২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের দৌঁড়ে তৃতীয় হয়েছেন জাভি হার্নান্দেজ। অথচ ওই সময়ে তিকিতাকা নামে একটি দর্শন প্রতিষ্ঠায় মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ড মায়েস্ত্রো। দেশ ও ক্লাবের হয়ে ভেসেছেন সাফল্য বানেও। যাতে করে ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরো জেতে লা রোজা। এর মাঝে ২০১০ সালে বিশ্বকাপের খরাও কাটায় ইউরোপের দেশটি। শুধু কী তাই ক্লাব ফুটবলেও নিজেকে পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন জাভি। কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি তার।
ফেরেঙ্ক পুসকান:
এখন ফেরেস্ক পুসকান নামে সবচেয়ে সেরা গোলের জন্য একটি পুরস্কার প্রবর্তন করেছে ফিফা। কিন্তু নিজের আলোকিত ফুটবল ক্যারিয়ারে কখনো ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদের হাঙ্গেরিয়ান ফুটবলার পুসকান। যিনি বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন, রঙ ছড়িয়েছেন ইউরোপের কঠিন মঞ্চেও। কিন্তু দ্বিতীয় সেরা হয়েই আক্ষেপ মুছতে হয়েছে তাকে। ১৯৬০ সালে বার্সেলোনার লুইস সুয়ারেজের পেছনে দ্বিতীয় সেরা হয়েছিলেন তিনি।
ডেনিস বার্গক্যাম্প:
ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার দৌঁড়ে ১৯৯২ সালে তৃতীয়, ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় হয়েছিলেন ডেনিস বার্গক্যাম্প। তখন সবাই ধরে নিয়েছিল হয়তো পরের বছরই আক্ষেপ ঘোচাবেন আয়াক্স ও ইন্টার মিলান কিংবদন্তি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যায় নেদারল্যান্ডস। যা বার্গক্যাম্পকে বড় স্বীকৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যদিও পরে আর্সেনালে নাম লিখিয়ে তিনটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও তিনটি এফএ কাপের খেতাব জিতেছিলেন বার্গক্যাম্প।
ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড:
নেদারল্যান্ডের আরেক প্রতিভাধর ফুটবলার ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, যিনি নিজের প্রতিভার স্বীকৃতি পাননি। ১৯৮৭ সালে রুড খুলিত ব্যালন ডি অর জেতেন। এর পরের দুই বছর দাপট দেখান মার্কো ভন বাস্তেন। ফলে ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় আর তৃতীয় হয়েই খুশি থাকতে হয় মাঝমাঠের জেনারেল রাইকার্ডকে। যিনি আয়াক্স ও নেদারল্যান্ডসের হয়ে দারুণ নৈপূণ্য প্রদর্শন করেন। পরে স্পেনের বার্সেলোনাতে নাম লিখিয়েও ফুটবল ঝলক দেখাতে সক্ষম রাইকার্ড।
এই তালিকার বাকি নামগুলো বার্সেলোনা ও স্পেনের আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, এসি মিলান ও ইতালির মার্কো বারেসি, লিভারপুলের কেনি ডালগ্লিশ, ম্যানইউয়ের এরিক ক্যান্টোনা, ইতালির জিয়ানলুজি বুফন, জার্মানির অলিভার কান, বায়ার্ন মিউনিখের জার্গেন ক্লিন্সম্যান ও ইংল্যান্ডের ববি মুর। আপন কীর্তিতেই মহান হয়ে উঠেছিলেন তারা।
মন্তব্য চালু নেই