পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টুয়েন্টিতেও অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ

একদিনের টুর্নামেন্টে বাংলাওয়াশের পর একমাত্র টি-টুয়েন্টি ম্যাচেও পাকিস্তানকে পরাজিত করলো অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে পাকিস্তানকে হারালো টাইগাররা। পাকিস্তানের ১৪১রানকে ১৬.২বলে-ই টপকে যায় বাংলাদেশ মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে।
এরআগে ১৪২ রানের টার্গেটে ছক্কা-চার মেরে শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই ছক্কা-চার দিয়ে বাংলাদেশের রানের খাতা খুললেও দলীয় ১৪রানের মাথায় রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার। কোন বল মোকাবেলা না করেই ননস্ট্রাইক থেকে রান নিতে গিয়ে ফিল্ডারের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন সৌম। তার স্থানে নেমেছেন সাকিব আল হাসান। ২.২ ওভারে দলীয় ১৭ রানে ওমর গুলের বলে অপর ওপেনার তামিম ইকবাল আউট হন। ব্যাটে নেমেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ৫.৪ ওভারে ব্যক্তিগত ১৯ রানে ওহাবের বলে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন আস্থাভাজন মুশফিকুর রহিম। রহিমের আউটের পর উইকেটে নামেন সাব্বির। পাকিস্তানের দেয়া ১৪১রান টপকে বাংলাদেশের টাইগাররা ১৬.২ ওভারেই ৩ উইকেটে ১৪৩ রান করে। ব্যক্তিগত ৫১ রানে সাব্বির রহমান ও ৫৭ রানে সাকিব আল হাসান অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের বোলার ওমর গুল ২৩রান দিয়ে এবং ওহাব ৩৯ রান দিয়ে ১টি করে উইকেট নেন।

মাত্র ১৪১ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের। লক্ষ্য পূরণে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখি তামিম ইকবাল। প্রথমে বল করতে আসেন মোহাম্মদ হাফিজ। প্রথম বলে কোন রান নেই। দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মরলেন তামিম ইকবাল। পরের বলেই বাউন্ডারি। এরপরের বলেও কোন ছাড় নয়। আবারও বাউন্ডারি। তবে পঞ্চম বলে দ্রুত এক রান নিতে গিয়ে মূল্য দিতে হলো তামিমকে। হারাতে হলো সৌম্য সরকারের উইকেট। কোন বল মোকাবেলা না করেই আউট হয়ে গেলেন সৌম্য সরকার।

ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নামলেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে আসা সোহেল তানভিরের কাছ থেকে মাত্র ২ রান নিলেন সাকিব-তামিম। তৃতীয় ওভারে এসে আবারও মূল্য দিতে হলো বাংলাদেশকে। উমর গুলের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন আফ্রিদি। তার দ্বিতীয় বলেই বাউন্সারকে পয়েন্টের পর দিয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু থার্ড স্লিপে মোহাম্মদ হাফিজের হাতে ধরা পড়ে ফিরে যেতে হলো তামিমকে।

তবে একই ওভারে উমর গুলকে দু’বার বাউন্ডারিছাড়া করে মুশকিুর রহিম বুঝিয়ে দিলেন ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তবে তা বেশিক্ষণের জন্য নয়। ৬ষ্ঠ ওভারে এসে ওয়াহাব রিয়াজের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেলেন মুশফিক। তার আগে ১৫ বলে চারটি বাউন্ডারি মেরে সংগ্রহ করলেন ১৯ রান। ৩৮ রানেই পতন ঘটলো তৃতীয় উইকেটের।

এর আগে অভিষিক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের হাতেই প্রথমে বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওদিকে পাকিস্তানের আরেক তরুন মুক্তার আহমেদ। বাঁ হাতি পেসার মুস্তাফিজুরের আউট সুইঙ্গার বলটি চলে গেলো মুক্তারের পেছন দিয়ে। প্রথম বলেই ওয়াইড।

তবে তাতেই হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। টস জিতে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের ইনিংসের লাগাম শুরু থেকেই টেনে ধরেছেন মুস্তাফিজুর এবং সাকিব আল হাসান।

চতুর্থ ওভারেই বল হাতে তুলে নিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এ ওভারের তৃতীয় বলে এসেই প্রথম বাউন্ডারি পেলো পাকিস্তান। তাও একবার নয়। পরপর দু’বার মাশরাফিকে বাউন্ডারিছাড়া করেন মুক্তার আহমেদ।

পরের ওভারে আরাফাত সানিকে নিয়ে আসেন অধিনায়ক। এবারও আরও মারমুখি শেহজাদ এবং মুক্তার। দু’জন মিলে আরাফাত সানিকে ৩টি বাউন্ডারি মেরে অভ্যর্থনা জানান। তার প্রথম ওভার থেকেই নেন ১৩ রান।

৬ষ্ঠ ওভারে আবারও সাকিব আল হাসানকে বোলিংয়ে ফিরিয়ে আনেন মাশরাফি। বল হাতে আবারও রান নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন সাকিব। এই ওভারের ৫ম বলেই নিশ্চিত স্ট্যাম্পিং মিস করেন মুশফিকুর রহিম। শেষ পর্যন্ত এ ওভার থেকে মাত্র ২ রান দিয়েছেন সাকিব। ৭ম ওভারে গিয়ে তাসকিন আহমেদকে আনা হয় বোলিংয়ে। আউটের কোন সুযোগ তৈরী করতে না পারলেও রান দিয়েছেন মাত্র চারটি।

৮ম ওভারে আবারও বোলিংয়ে ফিরে আসেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফিকে পেয়ে দুই ওভার গ্যাপ দিয়ে আবারও বাউন্ডারি বের করে নেন। এই ওভার থেকে মাশরাফি দেন মোট ৮ রান। ৯ম ওভার করতে আসেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম বল ডট দিলেও তার দ্বিতীয় বল থেকেই ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন মুক্তার আহমেদ। তবে ছক্কা দিলেও এই ওভারেই পাকিস্তানের প্রথম উইকেট তুলে নিলেন তাসকিন।

ওভারের ৬ষ্ঠ বলেই তাসকিনের লেগ সাইডের বলকে আকাশে তুলে মারেন আহমেদ শেহজাদ। লং অনে অনেক দুর দৌড়ে এসে অসম্ভব দক্ষতায় ক্যাচ তালুবন্দী করেন মাশরাফি। এরপরই অনেক দুর দৌড়ে এসে মাশরাফি-তাসকিন লাফিয়ে উঠে বুকে বুক মিলিয়ে উদ্যাপন করেন। যেটা দেখা গিয়েছিল বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের সময়।

ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নামার কথা মোহাম্মদ হাফিজের। কিন্তু, নামলেন আফ্রিদি। দশম ওভার বল করতে আসেন মাশরাফি। এবার আরও কৃপণ তিনি। দিলেন মাত্র ৩ রান। মাশরাফির কাছ থেকে মাত্র ২ রান নিতে পারলেন আফ্রিদি।

১১তম ওভারে ফিরিয়ে আনা হলো অভিষিক্ত মুস্তাফিজুরকে। অভিজ্ঞ আফ্রিদির সামনে মুস্তাফিজুর কেমন যেন একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম দুই বল থেকে ২, ২ করে চার রান নেওয়ার পর তৃতীয় বলেই নিলেন ছক্কা। পরের বলটাই দিলেন ওয়াইড। তিন বল থেকে ১১ রান দেওয়ার পরের বলেই আসল কাজটি করে দিলেন মুস্তাফিজুর। তার আউটসুইঙ্গার বলটি আফ্রিদির ব্যাটের কানায় লেগে বেরিয়ে যাওয়ার পথেই গ্লাভসবন্দী হলো মুশফিকুর রহিমের। আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই আঙ্গুল তুলে দিলেন আম্পায়ার।

১২তম ওভারে বোলিং করতে নিয়ে আসা হয় নাসির হোসেনকে। একটি বাউন্ডারিসহ নাসিরের কাছ থেকে ১১ রান তুলে নেন মুক্তার আহমেদ আর হারিস সোহেল। ১৩তম ওভারে বল করতে আসেন আরাফাত সানি। প্রথম ওভারে মার খেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে ফিরেই তুলে নিলেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা মুক্তার আহমেদের উইকেট। ডাউন দ্য উইকেটে এসে আরাফাত সানির ঘূর্ণি বল কভারের ওপর দিয়ে খেলতে যান মুক্তার। কিন্তু মিস করেন। বল ধরেই স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত থার্ড আম্পায়ারের কাছে রেফার করে আউটই হলেন মুক্তার আহমেদ। শেষ পর্যন্ত এই ওভারে ১০ রান দিলেন আরাফাত। ৩০ বলে ৩৭ রান করে ফিরলেন মুক্তার।

১৪তম ওভারে বল করতে আসেন নাসির হোসেন। এবারও রান নিয়ন্ত্রণে রাখলেন এ স্পিনার। মোহাম্মদ হাফিজ এবং হারিস সোহেল রান নিয়েছেন মাত্র ৫টি। ১৫তম ওভারে বল করতে আসলেন মাশরাফি। তার প্রথম বল থেকেই বাউন্ডারি নিলেন হাফিজ। পরের বলে ২ রান। শেষ পর্যন্ত এ ওভার থেকে ১০ রান নিলো পাকিস্তান। মাশরাফিও নিজের চার ওভারের কোটা পূর্ণ করে ফেললেন ২৯ রান দিয়ে এবং কোন উইকেট না নিয়ে।

১৬তম ওভারে বল করতে আসেন তাসকিন আহমেদ। এ ওভারটা হলো বেশ ব্যায়বহুল। ১৩ রান দিলেন তাসকিন। তার কাছ থেকে একটি ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারি আদায় করে নেন হাফিজ এবং হারিস সোহেল। ১৭ম ওভার করতে সাকিব আল হাসান। পথম ৫ বল থেকে সাকিব দিলেন ৫ রান। এরপর শেষ বলেই তাকে বাউন্ডারিছাড়া করেন হাফিজ।

১৮তম ওভার করার জন্য মুস্তাফিজুরের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। এবার প্রথম বলেই ২ রান দিলেন মুস্তাফিজুর। দ্বিতীয় বলে ১ রান। তৃতীয় এবং চতুর্থ বলে হাফিজ ব্যাটেই বল লাগাতে পারলেন না। পঞ্চম বলে গিয়ে হলেন পুরোপুরি পরাস্ত। এলবির জোরালো আবেদন। আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে জানিয়ে দিলেন আবেদন সঠিক। ১৮ বলে ২৬ রান নিয়ে আউট হয়ে গেলেন হাফিজ। সব মিলিয়ে চার রান দিলেন মুস্তাফিজ।

১৯তম ওভার করতে আসেন সাকিব আল হাসান। এই ওভারটায় ৭ রান দিলেন সাকিব। রান নিয়ন্ত্রণে রাখার চূড়ান্ত চেষ্টা সাকিবের। ৪ ওভার বল করে কোন উইকেট না পেলেও মাত্র ১৭ রান দিয়েছেন তিনি।

শেষ ওভার করার জন্য মাশরাফি বল তুলে দিলেন তাসকিনের হাতে। শেষ ওভারেও দারুন কৃপণ তাসকিন। টি২০ হিসেবে শেষ ওভারে দিলেন মাত্র ৭ রান। কৃপনই বটে। শেষ বলে তাসকিনের কাছ থেকে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে গেলেন সোহেল তানভির।

শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রানেই থেমে গেল পাকিস্তানের ইনিংস। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রাহক মুক্তার আহমেদ, ৩০ বলে ৩৭ রান। হারিস সোহেল শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে অপরাজিত ছিলেন ৩০ রানে। অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমান নিলেন ২০ রানে সর্বোচ্চ ২ উইকেট। ১টি করে আরাফাত সানি এবং তাসকিন আহমেদ। সবচেয়ে কৃপণ সাকিব আল হাসান। ৪ ওভারে দিলেন মাত্র ১৭ রান।



মন্তব্য চালু নেই