‘১০ দিন অনুপস্থিতিতেই শিক্ষার্থীকে জঙ্গি ভাববেন না’
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জানানো ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে, করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নিয়ম সম্পর্কে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘১০ অনুপস্থিত থাকলেই শিক্ষার্থীদের জঙ্গি মনে করবেন না। তার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে অনুপস্থিত থাকার কারণ খুঁজে বের করবেন এবং পদক্ষেপ নেবেন।’
বুধবার (২০ জুলাই) সরকারি তিতুমীর কলেজের একাডেমিক কাম এক্সামিনেশন হল এবং বিজ্ঞান ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ধর্মীয় অপব্যখ্যার মাধ্যমে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-মূল্যবোধ, আমরা শান্তি প্রিয় মানুষ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মিলে একসাথে বসবাস করে আসছি। ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্মকে ব্যবহার করে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম মানুষকে মানবিক মূল্যবোধ শেখায়। ইসলামের চর্চা মানুষের মূল্যবোধকে আরো উন্নতর জায়গায় নিয়ে যায়। আজ ইসলামের অপব্যাখ্যা করে মানুষ হত্যার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
‘ইসলামেই বলা আছে, মানুষ হত্যা মহাপাপ। তারপরও ইলামের নাম করে তারাবির নামাজের সময় মানুষ হত্যা করেছে। ঈদের সবচেয়ে বড় জামাতে মানুষ হত্যা করা হয়েছে; এটা কোন ইসলাম? আমরা বুঝতে পারি, ইসলামের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এসব করা হচ্ছে।’ যোগ করেন মন্ত্রী।
জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এরকম কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা খুঁজে পেয়েছি যারা শিক্ষার্থীদের বিপথে পরিচালিত করেছে। শিক্ষক নামধারী কিছু লোকও এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত। আমরা সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ সমস্যা থেকে উত্তোরণে শিক্ষকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীদের আচরণে চলা-ফেরায় কোনো ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে কিনা; বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখবেন। শিক্ষকের মধ্যে জঙ্গিবাদ ঠুকে যাচ্ছে সে বিষয়েও আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
সবার মধ্যে সহানুভূতিশীল সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সবার মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধা- ভাললোবাসা -সহানুভূতিশীল সম্পর্কে গড়ে তুলতে পারলে খুব সহজেই একে অপরের বিষয়গুলো জানতে পারবেন।’
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আড়াইগুণ শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে অনেক অভিভাবক জানেনই না বিষয়গুলো। অবিভভাকদের নজর রাখতে হবে নিজেদের ছেলে-মেয়েদের প্রতি। খবর রাখতে হবে সন্তানরা কে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে। নতুন কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো কিনা? কোন কোন বন্ধুর সঙ্গে চলে। সব কিছুর খবর নিতে হবে।’
‘পরিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মায়া-মততার সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সাথে সাথে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করতে হবে।’ বলেন মন্ত্রী।
জঙ্গিবাদের রিুদ্ধে সচেতনা এবং সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলার ধারাবিহত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২১ জুলাই কলেজের অধ্যক্ষ, ২৩ জুলাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রনিনিধি, ২৪ জুলাই মাদরাসা (হায়ার সেকেন্ডারি), ২৬ জুলাই (মাদরাসা-ফাজিল, কামিল) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের দিন ধার্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু হায়দার আহমেদ নাসেরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ একেএম রহমত উল্লাহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তিতুমীর কলেজের উপাধক্ষ্য প্রফেসর এনামুল হক খান।
মন্তব্য চালু নেই