১০ টি উপায়ে এড়িয়ে চলুন পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি

পিরিয়ড বা মাসিক একজন নারীর স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। কৈশোরকাল থেকে অভ্যস্থ হলেও অসচেতনতার দরুন প্রতিনিয়ত আমরা পিরিয়ডকালীন সেনিটেশনে বিভিন্ন ভুল করি যা হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। আরেকটু সচেতনতাই পারে আমাদের এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে। আসুন জেনে নিই পিরিয়ডকালীন ১০ টি সুরক্ষা টিপস।
১। বেছে নিন সঠিক স্যানিটেশন
এই আধুনিক সময়েও অনেক নারী পিরিয়ডের সময় ব্যবহার করেন কাপড় বা টয়লেট টিস্যু। এগুলো কোনটাই স্বাস্থ্যকর নয়। কাপড়ে তৈরি হয় অস্বস্তি, সারাক্ষণ ভেজাভাব থাকার কারণে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। বাজারে অনেক ধরণের স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায়, সেগুলো তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর। আপনাকে প্রথমেই ঠিক করতে হবে আপনার স্যানিটেশনের জন্য আপনি কি ব্যবহার করতে চান।

২। কতক্ষণ পর পর বদলাবেন
অনেকেই আছেন যারা একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কম ব্লিডিং হয়েছে ভেবে দীর্ঘসময় যাবত ব্যবহার করেন। রক্তপাত কম হোক বা বেশী, একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনোই দীর্ঘ সময় ব্যবহার করবেন না। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পর বদলে ফেলুন। যদি রক্তপাত বেশী হয়, তাহলে প্যাড নষ্ট হওয়া মাত্রই বদলে ফেলুন। জমে থাকা রক্তে নানান রকম জীবাণু সংক্রমণ করে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন যৌনাঙ্গের নানান রকম অসুখে ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনে।

৩। সাবান বা জীবাণুনাশক বেশি ব্যবহার করা
যোনীপথের নিজস্ব একটি পরিচ্ছন্নতার পদ্ধতি রয়েছে। শারীরিক নিয়মেই স্থানটি পরিচ্ছন্ন থাকে। পিরিয়ডের সময় সাবান বা জীবাণু নাশক ব্যবহার জরুরী মনে হলেও আসলে কাজটি ভুল। এসব পণ্যের ক্ষার এবং অন্যান্য রাসায়নিক যোনিপথের নিজস্ব ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী উপাদানকে নষ্ট করে দেয়। পরিচ্ছন্নতার জন্য এসময় সবচেয়ে উপকারী হচ্ছে গরম পানি। প্রত্যেকবার শুধু গরম পানি ব্যবহারই যথেষ্ট। স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তনের সময় পরনের প্যান্টিও বদলে ফেলবেন। এটা জরুরী। নাহলে এত কষ্ট করে পরিষ্কার হবার কোন মানে নেই।

৪। বেশী শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্যাড
বাজারের স্যানিটারি প্যাডগুলোতে ব্যবহার করা হয় সিনথেটিক উপাদান এবং শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হয় ডায়অক্সিন, রেয়নের মত ক্ষতিকর রাসায়নিক। যত বেশী শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন প্যাড, এসব উপাদানের পরিমাণ ততই বেশী। আর এই সব উপাদান দায়ী ওভারিয়ান ক্যান্সার হতে শুরু করে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত হরেক রকম ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য। তাই অধিক শোষণ ক্কমতা সম্পন্ন প্যাড এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।

৫। সঠিক উপায়ে পরিষ্কার করুন
যোনিপথ পরিষ্কারের সময় উপর থেকে পায়ুপথের দিকে হাত ঘুরিয়ে পরিষ্কার করুন। কখনোই বিপরীত দিকে পরিষ্কার করা ঠিক নয়। এতে পায়ুপথের জীবাণু প্রবেশ করে সংক্রমণ হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশনের অন্যতম কারণ ভুল পদ্ধতিতে জায়গাটি পরিষ্কার করা।

৬। তুলো বা সুতি কাপড়ের তৈরি প্যাড
প্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক শোষণ ক্ষমতার দিকে না গিয়ে নরম তুলো বা সুতি কাপড়ের তৈরি অরগানিক প্যাড কিনতে পারেন।

৭। ব্লিডিং যখন কম
ব্লিডিং-এর পরিমাণ কম থাকলে এবং আপনি যখন বাড়িতে আছে, তখন চেষ্টা করুন প্যাড ছাড়াই থাকতে। ২৪ ঘণ্টা এক টানা প্যাড পরিধান থেকে গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ তো হবেই, সাথে ব্যাকটেরিয়াল ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনও হবে।
৮। ঠিক মত গোসল
পিরিয়ডের সময় ঠিকমত গোসল করা খুবই জরুরি। শুধু গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখাই যথেষ্ট নয়, পরিষ্কার রাখতে হবে সম্পূর্ণ শরীর। গোসলে গরম পানি ব্যবহার করা গেলে তা আরো ভাল।

৯। আগে থেকে প্রস্তুত থাকুন
পিরিয়ডের আগে থেকে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। স্যানিটারি প্যাড সহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস ঘরে রাখুন। পিরিয়ড সাইকেল খেয়াল করলেই কাজটি সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য। আর এতে আপনি অপ্রয়োজনীয় বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাবেন।

১০। নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি ব্যবহার করুন
পিরিয়ডের সময় অনেকে দেখা যায় কাপড় ব্যবহার করছেন আবার বাইরে গেলে প্যাড ব্যবহার করছেন। যা আসলে ঠিক নয়। আবার অনেকে প্যাডের উপরে টয়লেট টিস্যু নেন দীর্ঘসময় ব্যবহারের জন্য। এটি খুবই খারাপ অভ্যাস। কারণ টিস্যুর নীচের প্যাডটিও জীবাণু সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে। তাই টিস্যু ফেলে দেওয়ার পর যখন সংক্রমিত প্যাডটি আপনি ব্যবহার করছেন তখন সেই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

খরচ কমানোর চাইতে সুস্থ থাকা বেশী জরুরি। আমরা হয়ত সাজগোজের নানান পণ্য কিনে ঠিকই খরচ করছি কিন্তু নিজের স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছি। এটা ঠিক নয়। তাই সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।



মন্তব্য চালু নেই