১০ টাকার চালে অনিয়মের কারণে সোয়া দুই লাখ কার্ড বাতিল
হতদরিদ্রদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে অনিয়মের জন্য দুই লাখ ১৮ হাজার ৮৬৫টি কার্ড বাতিল হয়েছে। চাল বিতরণে নিয়োগ দেয়া পরিবেশকদের মধ্যে ১৩০ জনকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে। ৩৭ জনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে বিভাগীয় মামলা।
সোমবার রাজধানীর আব্দুল গণি রোডের খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে এই প্রকল্পের ৫০ লাখ উপকারভোগীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। খাদ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে (www.dgfood.gov.bd) এই তালিকা জানা যাবে।
গত বছর প্রধানমন্ত্রী হতদরিদ্র মানুষদের জন্য এই বিশেষ কর্মসূচি চালু করেন কুড়িগ্রামের একটি উপজেলায়। পরে তা দেশের অন্য এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। শুরু থেকেই এই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে গণমাধ্যমে। হতদরিদ্রদের বদলে সম্পদশালীদের নাম তালিকাভুক্ত করা, ওজনে কারচুপি বা পুরো চাল লোপাট করে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এই অনিয়ম নিয়ে সংসদে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অনিয়ম রোধে তৎপর হয় প্রশাসন। নেয়া হতে থাকে ব্যবস্থা। রংপুরের একটি উপজেলাতেই বাতিল হয় ৭০ হাজার কার্ড।
এই প্রকল্পের আওতায় বছরের পাঁচ মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর, অক্টোবর নভেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিলে প্রতি মাসে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম পর্বে অনিয়ম থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ লাখ ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। খাদ্য বিভাগের দুইজনকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও দুইজন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন কোন অভিযোগ উঠলেও আমরা তদন্ত করব। ব্যবস্থা নেব।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি এ কর্মসূচিটাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমাদের বিজয় অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আমাদের বিজয় আনতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
তিন মাসের অভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষা নিয়েছে সরকার
খাদ্যমন্ত্রী জানান, হতদরিদ্রদের জন্য এই কর্মসূচিকে আরও কার্যকর করতে খাদ্যবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি জানান, নতুন নীতিমালায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে ইউনিয়ন খাদ্যবান্ধব কমিটি এবং জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে জেলা খাদ্যবান্ধব মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। উপজেলা কমিটিতে সাংবাদিকদেরকেও রাখা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের তালিকা খাদ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যে কোন অঞ্চলের তালিকা দেখা যাবে। ডিলারদের তালিকা দেখা যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আপলোড করা তালিকায় কোন স্বচ্ছল ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকলে তা সহজেই সকলের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হবে। কোন অভিযোগ থাকলে তা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে মোবাইল, এসএমএস, ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবহিত করা যাবে। তালিকায় হতদরিদ্র ছাড়া স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম বাতিল করে তালিকা সংশোধন করা সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কাউকে ছাড় দিতে চাইলে আমার দলিল-দস্তাবেজ খুলে বসতাম না।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাঁচ মাস ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল দেব। সারা বছর দিলে চালের দাম পড়ে যাবে, ধানের দাম পড়ে যাবে। অগ্রহায়ণে চাল দিলে ধানের দাম তো কৃষক পাবে না।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৭ জন সুবিধাভোগীকে তালিকাভুক্ত করেছে। গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর প্রান্তিকে এ কর্মসূচিতে মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান বক্তব্য দেন।
মন্তব্য চালু নেই