রানা প্লাজা ধসের বর্ষপূতি
১০৫ লাশ এখনো ‘বেওয়ারিশ’
আজ ২৪ এপ্রিল, সাভারের রানা প্লাজায় স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় দিন। গত বছরের এই দিনেই রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সরকারি হিসেবে প্রাণ হারায় এক হাজার ১৩৪ জন। এর মধ্যে ধ্বংসস্তুপ থেকেই উদ্ধার হয় এক হাজার ১১৬ জনের মৃতদেহ। বাকিরা হাসপাতালে মারা যান। তবে মারা গেলেও এখনো ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি ১০৫টি লাশের। আবার একই ধরনের নমুনা নেয়ার কারণে ১১ জোড়া ডিএনএ একই বৈশিষ্ট্যের। তাই চরম এক না পাওয়ার বেদনায় পুড়ছেন সেই অজ্ঞাত লাশের স্বজনরা।
জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ ৩১২টি লাশের মধ্যে এ পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষায় ২০৭ জনের মৃতদেহ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ১০৫টি মৃতদেহ এখনো বেওয়ারিশ হয়ে রয়েছে।
কেন এই ১০৫ জনের মৃতদেহ সনাক্ত করা যাচ্ছে না এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনএ পরীক্ষাগারের প্রধান কর্মকর্তা প্রফেসর শারীফ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর বিভিন্ন নমুনা দেখে অনেকের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে, তাতেও ভুল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন আবার পুনরায় ১০৫ জনের স্বজনদের নমুনা সংগ্রহের জন্য আমরা সুপারিশ করেছি। এটি গৃহীত হলে অজ্ঞাত সব লাশের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন। কিন্তু নিহত সকলের ডিএনএ নমুনা না থাকায় সকলের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নতুন করে ওইসব নিহতের আত্নীয়দের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি।’
১১ জোড়া লাশের একই ডিএনএ নমুনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ডিএনএ পরীক্ষার সময় দেখা গেছে ১১ জোড়া লাশের ডিএনএ নমুনার ফলাফল একই। কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এগুলো একজনের দেহেরই অংশ। মূলত ধ্বংস স্তুপে উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ লাশই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। শরীরের অঙ্গগুলি বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কারণেই এই সমস্যা হয়েছে।’
রানা প্লাজা ধসে নিহত অজ্ঞাতদের পরিচয় সনাক্তের জন্য নতুন করে পরিবারের সদস্যের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের সুপারিশ করেছে জাতীয় ডিএনএ পরীক্ষাগার কর্তপক্ষ। তাদের মতে, রানা প্লাজা ধসের পর অনেকের মৃতদেহ ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই দাফন করেছে তাদের স্বজনরা। এ কারণে এখন সবার পরিচয় সনাক্ত করা যাচ্ছে না।
সুপারিশের ব্যাপার নিশ্চিত করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রাণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেন, ‘ডিএনএ ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে নতুন করে নমুনা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন পেলে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
তবে যেসব নিহত শ্রমিকের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি সরকার তাদের পরিবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বলে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
মন্তব্য চালু নেই