“হ্যাঁ, আমি সিগারেট খাই, আপনার কোনো সমস্যা?”

এই কথাটা আমি অনেকের সামনে বলতে চেয়েছি। আমার পত্রিকা অফিসে আমার বয়সী, ছোট, বড় সকল রিপোর্টার সিগারেট টানতো প্রকাশ্যে, ক্যান্টিনে, চায়ের দোকানে, অফিসের ভেতরে আর শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারনে আমি ধুমপায়ি হওয়া সত্বেও ধুমপান থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়েছি। কেন, সিগারেট খাওয়াটা কি পুরুষ সাংবাদিকদের জন্মগত অধিকার?

যে দেশে রাস্তাঘাটে, অফিসে, বাড়িতে অহরহ পুরুষ সিগারেট টানে, অথচ শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারনে একটা সিগারেট ধরিয়ে ‘নষ্টা’ মেয়ের খেতাব পেয়ে যাবেন। সাথে খ, ম, চ জাতিয় শব্দ তো আছেই। সিগারেট খাওয়াটাও শুরু করে করেছিলাম একারনেই। যে সমাজের নষ্টানুভুতি এত প্রবল, সেখানে নষ্টা নারী হওয়াটা গর্বের!

বাম দলগুলোর সুন্দরবন রক্ষার লং মার্চকে যাতে কেউ ‘কলংকিত’ না করতে পারে তাই বলা হয়েছিল মেয়েরা যেন কেউ প্রকাশ্যে সিগারেট না টানে। মেয়ের হা্তে সিগারেট দেখলে আন্দোলন পন্হড হয়ে যাবেো!

যারা বলেন, সিগারেট নারী পুরুষ উভয়েরই শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তাদের জন্য বলি সিগারেট খাওয়াটা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি এখন, এখানে জনবহুল এলাকায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেলেও কেউ ফিরেও দেখেনা। কিন্তু কেউ যদি পোষ্টার টানায় ‘মিন্টু মামার চায়ের দোকানে মেয়েদের সিগারেট খাওয়া নিশেধ’, তাহলে সিওর মিন্টু মামার দোকানের সামনে এক বসাতে এক প্যাকেট শেষ করে আসবো।

asas

একজন আমাকে বলেছিল, মেয়ের কথা ভেবে সিগারেট ছেড়ে দিতে। ভালো পরামর্শ, তাকে বলেছিলাম, ছেড়ে দেব হয়তো!

আরেকজন বলেছিল, মা সিগারেট খায় এটা দেখলে মেয়ে কি শিখবে? তাকে বলেছিলাম, যুগ যুগ ধরে বাপের সিগারেট খাওয়া দেখে মেয়েরা কি শিখেছে? মেয়েকে ভালো শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব কি মায়ের একার? তাছাড়া বাপের সিগারেট খাওয়া দেখে নিয়ে নিশ্চয় ছেলে মেয়েরা নষ্ট হয়ে যায়নি, তাহলে কিভাবে ভাবেন মায়েরটা দেখে নষ্ট হয়ে যাবে?

নারী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার কে কে ক্ষমতায় আছে এ নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই একেবারেই। এইসব পদে নারিদের থাকাটা নারীর ক্ষমতায়নের চিহ্ন বহন করলেও আমি মনে করি, সমাজে নারী পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় তাদের ভুমিকা নগন্য। কারন এখনো অধিকাংশক্ষেত্রেই তারা পুরুষতান্ত্রিকতার তোষন করে চলেছে। পুরুষতান্ত্রিকতার ছত্রছায়ায় ক্ষমতায়িত হবার চেয়ে, ক্ষমতাহীন থেকে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই করাটা কঠিন। আর আমার দেশের নারীদের কি ক্ষমতাবান বলা যায়?

যে মেয়েরা প্রথম সাইকেল চালানো শুরু করেছিল, জিন্স প্যান্ট পরা শুরু করেছিল, দোকান থেকে প্রকাশ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা শুরু করেছিল, প্রকাশ্যে ধুমপান করেছিল, যে পাহাড় ডিঙ্গিয়েছিল এদেরকেই আমি এগিয়ে যাওয়া মেয়ে বলবো। কাজগুলো তেমন কোনো গুরুত্বপুর্ন না, কিন্তু এগুলোই পুরুষতান্ত্রিকতার ঘুনে ধরা সমাজের বুকে আঘাত হেনেছিল, এখনো হানে।

লেখাপড়া শিখে বড় পদে চাকরি করা মেয়ের বড় অর্জন, এমন মেয়ে আমাদের দেশে এখন অনেক আছে। কিন্তু ‘নষ্টা’ হবার ভয়কে উপেক্ষা করে প্রথা ভাঙ্গা মেয়ের সংখ্যা অনেক কম।

আমাদের দেশে এখন তাই অনেক বেশি নষ্টা মেয়ে দরকার!

‪#‎নারী‬ দিবসের শুভেচ্ছা

(শামীমা মিতু-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস)



মন্তব্য চালু নেই