হুজির টার্গেটে লতিফ, গণজাগরণ
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি) বোমা ও উচ্চ মাত্রার বিস্ফোরক তৈরির ল্যাবরেটরির সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীর ওয়ারী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এই ল্যাবরেটরিগুলো থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির উপাদান। এসময় আটক করা হয় সংগঠনের চার সদস্যকে।
আটককৃতরা হলেন- হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের আপারেশন উইংয়ের নেতা ও ফতুল্লা আমতলী মসজিদের ইমাম মো. রফিক আহমেদ, রাজধানীর প্রাইম ইউনিভার্সিটির ক্যামেস্ট্রির শেষ বর্ষের ছাত্র ও বোমা বিশেষজ্ঞ মো. উমর ওরফে ফয়জুল ওরফে রবি, মো. নাদিম ও মো. সালাউদ্দিন আহমেদ। রাজধানীর টিকাটুলি ও উত্তরা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা ডিবি পুলিশকে জানায়- ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনাকীর্ণ স্থানে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, আটককৃতরা স্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীসহ অনেক ভিআইপিকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চেও হামলার পরিকল্পনা ছিল।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহযোগতিায় ডিবি পুলিশ গত দুই দিন ধরে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।
মনিরুল জানান, আটককৃত উমর নিজেকে একজন উচ্চমাত্রার বোমা বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেন। গোয়েন্দাদের হাতে এই পর্যন্ত উমরের মতো এতো বড় মাপের বোমা বিশেষজ্ঞ ধরা পড়েনি বলে জানান তিনি। এই উমরকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে তার পড়াশোনার যাবতীয় ব্যায়ভার বহন করে আসছিল বর্তমানে কারাগারে আটক হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবু সাইদ। এরপর রফিক তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়। উমরকে উত্তরা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে পাকিস্তানের তৈরি একটি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
মনিরুল ইসরাম জানান, গত আগস্টে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকায় সেই পরিকল্পনা থেকে তারা সরে আসে। চলতি অক্টোবরের শেষ দিকে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা ছিল তাদের। এজন্য কিছু ডেটোনেটরও তৈরি করে ফেলেছিল তারা।
তিনি জানান, এক্সপ্লোসিভ সহজে তৈরি করা সম্ভব হলেও ডেটোনেটর তৈরি করা সহজ নয়। উদ্ধারকৃত ল্যাবরেটরিগুলো থেকে ১০০ গ্রাম এইচএমডিটি উদ্ধারকর হয়। যা দিয়ে ২৫টি ডেটোনেটর তৈরি করা সম্ভব ছিল।
আটককৃতরা জানিয়েছে, বোমা তৈরির জন্য তাদের কখনো অর্থের অভাব হয় না। জঙ্গিদের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে বেশ কয়েকজনের নামও বলেছেন আটকৃতরা। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি যুগ্ম কমিশনার।
তবে তিনি জানান, উদ্ধারকৃত ল্যাবরেটরিগুলো থেকে বেশ কয়েকপ্রকার উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক পদার্থ পাওয়া গেছে। এসব বিস্ফোরক পদার্থের ব্যবহার বাংলাদেশে ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। ল্যাবরেটরিগুলো থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, ডেটোনেটর, বোস্টার, মেটালিক কন্টেনার, সুইচ, পিপেট, ফানেলসহ ৫৫ প্রকারের বিভিন্ন বিস্ফোরক পদার্থ ও সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
মনিরুল ইসলাম জানান, আটককৃতরা অনেক সেনসেটিভ তথ্য দিয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো অনেক চাঞ্চ্যলকর তথ্য পাওয়া যাবে তাদের কাছ থেকে।
মন্তব্য চালু নেই