হিন্দুদের সুরক্ষার আহ্বানে ভারত সাড়া দেবে?
বাংলাদেশে সম্প্রতি হিন্দুদের ওপরে আক্রমণের ঘটনায় ভারতের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে যে মন্তব্য করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এক নেতা, তা নিয়ে ভারতেও চর্চা শুরু হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রেই বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রাণা দাশগুপ্তের সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তিনি মন্তব্য করেছেন যে তার দেশে সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে যে আক্রমণগুলি ঘটছে, সে ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ করা উচিত।
মি দাশগুপ্ত যদিও দাবি করেছেন যে এরকম কোনও কথা পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেননি, তবে পিটিআই কর্তৃপক্ষ বলেছেন তারা তাকে সঠিকভাবেই উদ্ধৃত করেছেন। ভারতের ইংরেজি জাতীয় কয়েকটি দৈনিক আর টেলিভিশন চ্যানেলে এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে আলোড়ন না পড়লেও চর্চা চলছে ভারতে।
কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সব্যসাচী বসুরায় চৌধুরী বলেন, “এটা ঠিকই যে বাংলাদেশে কোনও ঘটনা ঘটলে, ভারতের রাজনীতি বা পরিস্থিতিকে সেটা প্রভাবিত করে। তাই ভারতের যে এ ব্যাপারে স্বার্থ জড়িত, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু যেটা অত্যন্ত জরুরী আর বিবেচ্য, সেটা হল কোনও পরিস্থিতিতেই কোনও প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় ভারতের। আমার মনে হয় না ভারত এ নিয়ে সত্যিই কোনও পদক্ষেপ নেবে।“
ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে রাণা দাশগুপ্তের ওই মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে আক্রমণের ঘটনা নিয়ে বর্তমান বিজেপি সরকার সরব।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এবং তার দল বিজেপি নেতারা খোলাখুলি বলেন পাশের দেশগুলোতে আক্রান্ত হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় পাবে।
বিজেপি-র জাতীয় পলিসি রিসার্চ গ্রুপের উপ প্রধান অনির্বাণ গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আন্তর্জাতিক বিষয়ে তো ওইভাবে হস্তক্ষেপ করা যায় না। তবে এক্ষেত্রে ভারত যেটা করছে বা করতে পারে, সেটা হল পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা, বোঝার চেষ্টা করা। এটাও আমাদের মানতে হবে যে শেখ হাসিনার সরকার মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে একটা বড় লড়াইতে লিপ্ত। আর এই সব ঘটনার পেছনেই তো মৌলবাদীরাই রয়েছে!”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব সবসময়ে বলে থাকেন, যদি অন্য দেশে কোনও হিন্দু আক্রান্ত হয়, তাহলে সে ভারতে স্বাগত।
তবে বাংলাদেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে হিন্দুরা ভারতে চলে আসতে থাকলে সেটা নিঃসন্দেহে একটা চাপ তৈরি করবে বলে মনে করেন অধ্যাপক সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী।
বিজেপি-র অনির্বাণ গাঙ্গুলি বলেন, “এটা হিন্দু-মুসলমান ব্যাপার তো নয়। শুধু হিন্দুরা তো মারা যাচ্ছেন না! যে ব্লগারদের মারা হয়েছে, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করতেন, ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করতেন। তাই এটা হিন্দু মুসলমান হিসাবে না দেখে সামগ্রিকভাবে সভ্যতার ওপরে আক্রমণ হিসাবেই দেখতে হবে আমাদের। যেখানে একদিকে আই এস, অন্যদিকে শান্তি আর গণতন্ত্র-প্রিয় মানুষ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, বহুত্ববাদে বিশ্বাসী মানুষ। এঁদের ওপরেই আক্রমণ হচ্ছে।“
বাংলাদেশে শুধু এবছরই ছয়জন হিন্দু, দুজন খ্রিষ্টান আর একজন বৌদ্ধ নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও দশজনকে হত্যা করা হয়েছে – যাদের মধ্যে আছেন ব্লগার, সমকামী অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের মতো মানুষও।
কথিত ইসলামিক স্টেট নামক জঙ্গি গোষ্ঠী এই হত্যাকান্ডগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার বলে থাকে স্থানীয় জঙ্গিরা এসব হত্যা করছে। খবর-বিবিসি বাংলা।
মন্তব্য চালু নেই