হাসপাতালে রাতারাতি পুরুষ থেকে হয়ে গেলেন মহিলা!
হৃদরোগের চিকিত্সায় হাসপাতালে ভর্তির সময় ছিলেন ‘পুরুষ ’৷ একদিন পর যখন ছুটি পেলেন , তখনই তিনি হয়ে গিয়েছেন ‘মহিলা ’৷ চমকাবেন না৷ রাতারাতি হওয়া এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা বাস্তবে ঘটেছে কসবার দেবপ্রিয় মিত্রর সঙ্গে৷ ঘটিয়েছে কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতাল৷ খবর ইন্ডিয়া টাইমসের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের গাফিলতি সম্পর্কে জানানো সত্ত্বেও লাভের লাভ হয়নি কিছুই৷ বিরক্ত দেবপ্রিয় মিত্র , অভিযোগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনে৷ অবিলম্বেই ফৌজদারি মামলা করার কথাও ভাবছেন তিনি৷ পারিবারিক চিকিত্সক মিলন ছেত্রীর পরামর্শে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করাতে অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালে ভর্তি হন দেবপ্রিয় মিত্র৷
ঠিক তার আগের দিনই টাউন হলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের নিশানায় এক নম্বরে ছিল এই হাসপাতাল৷ দেবপ্রিয়বাবুর অভিজ্ঞতা , ‘প্রথমে তো ভর্তি নিতে প্রচুর সময় লাগায়৷ আমি গাড়িতে বসে অসুস্থ বোধ করছি বলায় তবে শেষমেষ আমাকে কেবিন দেওয়া হয়৷ ’ নগদ ৩৫ হাজার জমা করে প্রাইভেট ডিলাক্স কেবিনে ভর্তি হন দেবপ্রিয়বাবু৷
সেদিন রাতে যাবতীয় রক্তপরীক্ষা করার পর জানা যায় , ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেশি রয়েছে তাঁর৷ ‘ক্রিয়েটিনিন বেশি থাকার কারণে আমার অ্যাঞ্জিওগ্রাফি পিছিয়ে দেওয়া হয়৷ ওখানকার জুনিয়র ডাক্তাররা বলছিলেন , চার -পাঁচদিন হাসপাতালে থেকেই ক্রিয়েটিনিন নিয়ন্ত্রণ করে নিতে৷ তারপর টেস্ট করে অ্যাঞ্জিও ’র ব্যবস্থা করা হবে৷ কিন্ত্ত , ডক্টর ছেত্রী বলে দেন হাসপাতালে থেকে বিল বাড়ানোর দরকার নেই৷ বাড়িতে থাকলেই কন্ট্রোল হয়ে যাবে ক্রিয়েটিনিন ,’ বলেন দেবপ্রিয়৷
সেইমতো ২৪ তারিখ দুপুরে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেন তিনি৷ বিল হয় প্রায় ২১ হাজার৷ ‘একদিনের জন্য টাকাটা খুব বেশি মনে হলেও ভেবেছিলাম , স্বাস্থ্যবিমা আছে৷ ম্যানেজ হয়ে যাবে ,’ দাবি দেবপ্রিয়র৷ বাড়ি ফিরে , মেডিক্লেম -এ আবেদন করতে গিয়েই চোখ কপালে ওঠে তাঁর৷ দেখা যায় , প্রথম পাতায় পুরুষ বলে উল্লেখ থাকলেও পরের পাতায় মহিলা বলে কেস হিস্ট্রি লিখে ছুটি দিয়েছে হাসপাতাল৷ প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে তিনি মনে করেছিলেন , ভুলটা শুধরে নেবে হাসপাতাল৷ কিন্ত্ত , সে গুড়েও বালি৷
দেবপ্রিয়র অভিযোগ , ‘পরদিনই হাসপাতালে ফোন করে ভুলের কথা জানিয়েছিলাম৷ ওরা বলল , দেখছি৷ তারপর হাসপাতাল থেকে সার্ভিস কেমন হয়েছে জানতে ফোন করল৷ তখন আবার সবকিছু খুলে বললাম৷ আবার বলল , দেখছি৷ ’ এ পর্যন্ত ফোনাফুনি , মেল কোনও কিছুতেই কোনও ফল পাননি বলে জানাচ্ছেন দেবপ্রিয়৷ তার কথায় , শোধরানোর বদলে হাসপাতালের তরফে ‘ফ্যাক্ট চেক ’-এর পরামর্শ মিলেছে৷
এদিকে , হাসপাতালের এ হেন ভুলের জেরে স্বাস্থ্যবিমা থাকা সত্ত্বেও একদিনের চিকিত্সা বাবদ ২১ হাজার টাকা গ্যাঁট থেকে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷ তাঁর কথায় , ‘আমার ২১ হাজারের জায়গায় যদি দু’লাখ বিল হত৷ বা ২১ লাখ ? তখন কী করতাম বলুন তো ? অসুস্থ পেশেন্টকে বাড়ি নিয়ে আসার সময় কী পেশেন্ট পার্টির দীর্ঘ কেস রিপোর্ট খুঁটিয়ে পড়ার সময় থাকে ? তারা তো প্রথম পাতা দেখেই নিয়ে চলে আসেন৷ ’ হাসপাতালের তরফে কোনও সদুত্তর না পেয়ে গত ২ মার্চ স্বাস্থ্যসচিবকে গোটা ঘটনা জানিয়ে নালিশ ঢুকেছেন দেবপ্রিয়৷ বৃহস্পতিবার তিনি বলেন , ‘দিন কয়েক হল জ্বরে পড়েছি৷ একটু সুস্থ হলেই থানায় নালিশ করব হাসপাতালের বিরুদ্ধে৷
এরকম ভুল করেও কোনও তাপ উত্তাপ নেই ওদের৷ ’ কী বলছে হাসপাতাল ? অ্যাপোলো গ্লেনেগলস কলকাতার সিইও রানা দাশগুপ্ত বলেন , ‘আমার ঠিক জানা নেই সমস্যাটা৷ পেশেন্টকে বলুন সরাসরি আমাকে ফোন করতে৷ কোনও সমস্যা থাকলে , সেটা আমরা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করব৷ ’যদিও রানা অবধি যাঁরা সরাসরি ফোনে পৌঁছতে পারবেন না , তাঁদের এ জাতীয় হঠাত্ ‘লিঙ্গ পরিবর্তনের ’ সমাধান কোন জাদুতে হবে , সে জবাব নেই !
মন্তব্য চালু নেই