হাসপাতালের সবাই যখন মানববন্ধনে…
দেশব্যাপী হরতাল আর অবরোধের নামে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বুধবার দুপুরে চিকিৎসক ও মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা জেলা সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করেন। আর মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের সকল কার্যক্রম।
ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাবাই অংশ নেন মানববন্ধনে। হাসপাতাল ছিল একেবারেই ফাঁকা। এমনকি জরুরি বিভাগেও কোনো চিকিৎসককে দেখা যায়নি।
রোগীদের ভিড় ছিল চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে। ওয়ার্ডগুলো ছিল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীশূন্য।
বিজয়নগর উপজেলার গোলাম রব্বানী (৭০) আধাঘণ্টা ধরে জরুরি বিভাগে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু দায়িত্বরত কোনা চিকিৎসক পাচ্ছেন না। কোনো একজনকে জিজ্ঞেস করে জেনেছেন, চিকিৎসকরা মিটিংয়ে আছেন।
একই উপজেলার সাটিরপাড়া গ্রামের আসমা বেগম এসেছিলেন শিশু চিকিৎসকের কাছে। তিনিও অপেক্ষা করছেন। প্রায় এক ঘণ্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু চিকিৎসকের কোনো খোঁজ নেই।
কসবার বাদৈর গ্রামের সুমা আক্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কালীসীমার আকলিমা আক্তার, নয়নপুরের রমজান আলী— সবারই দীর্ঘ অপেক্ষা চিকিৎসকের জন্য।
সিংগারবিলের লিমা আক্তার বলেন, পেয়িং বেডে তার রোগী আছে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় স্যালাইন শেষ হওয়ার পর সেটি খুলে দিতে দায়িত্বরত নার্সকে বলা হয়। কিন্তু তিনি রোগীর স্বজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বুধবার সকালে তারা ওষুধ না দিয়ে মানববন্ধনে চলে যান। নার্স বলেছেন, পরে ওষুধ দেওয়া হবে।
দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বুধবার দুপুরে চিকিৎসক ও মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা জেলা সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করেন। সকাল থেকেই এ কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি চলে। লোকসমাগম বাড়াতে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখে মানববন্ধনে অংশ নেন দায়িত্বরত সবাই।
মানববন্ধন শেষে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি ডা. এফ জামানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু সাঈদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মচারী সংগঠনের নেতা আবুল বাসেদ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেতা নুরুনবী প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. হাসিনা বেগম। মানববন্ধনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ, মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী এ্যাসোসিয়েশন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এ্যাসোসিয়েশন, নার্সেস এ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নার্স মিনা রানী ঠাকুর বলেন, আধাঘণ্টার জন্য মানববন্ধনে গিয়েছিলাম। সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
বিষয়টি নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকবর আলীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। কারণ দুই দিন ধরে আমি ছুটিতে আছি।’
এর আগে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের ব্যানারে একই ধরনের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দিনে ১০ শিশুসহ ২৩ জন মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যা সংখ্যার দিক থেকে অস্বাভাবিক। এ সব মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলারও অভিযোগ ওঠে। গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এ সব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের এ ঘটনা সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্ট মহলকে।
মন্তব্য চালু নেই