হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করবে যে ১০টি অভ্যাস
বর্তমান সময়ে যে রোগটি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে সেটি হল হার্ট অ্যাটাক। ১৯৫০ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে আমেরিকায় ৭০% মানুষ হার্ট অ্যাটাক এবং ৮০% স্টোকে মারা গিয়ে থাকে। এমনকি হার্ট অ্যাটাকে মানুষ মারা না গেলেও হার্টের অসুখের সংখ্যা বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হার্টের অসুখ বা হার্ট অ্যাটাকের জন্য মূলত আমাদের অভ্যাস, আমাদের জীবনযাত্রা দায়ী। হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের অসুখ কিছু উপাদানের উপর নির্ভর করে থাকে। যেমন ধূমপান, উচ্চ রাক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টরেল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অপুষ্টিকর খাদ্যভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ইত্যাদি। কিছু বদঅভ্যাস ত্যাগ এবং কিছু অভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১। ধূমপান ত্যাগ
ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ। মধ্যবয়সী ৫০% নারীরা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তে হন টোবাকোর কারণে। এই তামাক হার্ট এবং রক্ত নালী ব্লক করে দিয়ে ধমনী সরু করে দিয়ে থাকে। যেসব মহিলা ধূমপান এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তাদের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
২। কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণে রাখা
রক্তে উচ্চ কোলেস্টরেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকখানি বৃদ্ধি করে থাকে। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল ধমনীর ভিতর দেয়াল তৈরি করে, ধমনীকে সরু করে দিয়ে। এতে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। চেষ্টা করুন কোলেস্টরেল লেভেল ২০০ মিলিগ্রাম, এলডিএল কোলেস্টরেল লেভেল ১৩০ মিলিগ্রাম এবং এইচডিএল ৩৫ মিলিগ্রামের উপরে রাখার।
৩। ব্যায়াম
২০১৪ সালের প্রকাশিত journal Circulation মতে দৈনিক কার্যকলাপ দ্বারা ৪৬% পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাক রোধ করা সম্ভব। প্রতিদিন অল্প সময় হলেও ব্যায়াম করুন। কমপক্ষে সপ্তাহে ২.৫ ঘন্টা ব্যায়াম করুন।
৪। স্বাস্থ্যকর ডায়েট
স্বাস্থ্যকর ডায়েট হল চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, ফল, সবজি এবং আঁশ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে ফল-সবজি বিশেষত সবুজ সবজি, ভিটামিন সি জাতীয় ফল হার্ট সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। খাবারে অলিভ অয়েলের ব্যবহার ধমনী ব্লক হওয়ার মত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৫। এক টুকরো ডার্ক চকলেট
অদ্ভুত শোনালেও এটি সত্যি এক টুকরো ডার্ক চকলেট আপনার হার্টের জন্য উপকারী। ডার্ক চকলেটে ফ্ল্যাভোনয়েড নামক উপাদান থাকে, যা ধমনীকে নমনীয় রাখে। অন্যান্য উপাদান শরীরে খারাপ কোলেস্টরেল প্রতিরোধ করে থাকে। সপ্তাহে কয়েকবার একটুকরো ডার্ক চকলেট খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৬। ভিটামিন বি গ্রহণ
প্রতিদিন ভিটামিন বি গ্রহণ করুন। সুইডিশ এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ভিটামিন বি (ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন বি১২) শতকরা ৪০ ভাগ মানুষের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায় যারা ভিটামিন বি গ্রহণ করেন না।
৭। পরিমিত লবণ গ্রহণ
লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। লবণ বেশি খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে থাকে। যা হার্টের জন্য ভাল নয়। খাবারে সাথে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া আজই বন্ধ করুন।
৮। ওজন হ্রাস
অতিরিক্ত ওজন শুধু আপনাকে মোটা করে তোলে না আপনার হার্টেরও ক্ষতি করে থাকে। বিশেষ করে পেটের অতিরিক্ত মেদ। ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনার হার্ট সুস্থ থাকবে।
৯। মাছ খান
সপ্তাহে অত্যন্ত একদিন মাছ খান। ২০০২ সালে প্রকাশিত The American Medical Association যারা সপ্তাহে কমপক্ষে একবার মাছ খান, তাদের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
১০। পরিমিত ঘুম
ঘুম আপনার শরীরকে রিফ্রেশ করে নতুন কাজের শক্তি জুগিয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার শরীরকে বিশ্রাম না দিতে পারেন, তবে তা একটা সময় গিয়ে ভেঙে পড়বে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
নিয়মতান্ত্রিক জীবন, স্বাস্থ্যকর ডায়েট পারে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে। নিয়ম মেনে চলুন, সুস্থ থাকুন।
মন্তব্য চালু নেই