হামলা-হত্যায় দায় স্বীকারের উৎস ‘আত তামকিন’!
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা এবং ব্লগার হত্যায় জঙ্গিদের দায় স্বীকার নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে দুই বিদেশি হত্যার পর ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর দায় স্বীকারের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। নানা বিতর্কের পর একটা বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন, দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমে পাঠানো এসব বার্তা দেশের বাইরে থেকে আসেনি।
সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ নামের একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার কো অর্ডিনেটর রিটা কাৎস এর অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে ডয়চে ভেলে কাল এমনই একটি খবর প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে ‘আত তামকিন’ নামের একটি বাংলা ব্লগ সাইট থেকে এসব হুমকি বা দায় স্বীকারের বার্তাগুলো এসেছে।
একের পর এক হত্যা, এবং তার দায় স্বীকারের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ বুধবার ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যারও দায় স্বীকার করেছে আইএস। আর এই খবর জানিয়েছে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ তাদের পোর্টালে। সাইট দাবি করেছে, আইএস এক টুইটার বার্তায় এই দায় স্বীকার করেছে। এর আগে দুই বিদেশি হত্যা এবং হোসনি দালান এলাকায় আশুরার মিছিলে বোমা হামলারও দায় স্বীকার করে আইএস। সে খবরও জানা যায় সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের মাধ্যমে। তবে প্রকাশকদের ওপর হামলা এবং হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম নামে আরেকটি সংগঠন। আর এই দায় স্বীকার তারা বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে ই-মেইলেই জানায়। পরে সাইট ইন্টেলিজেন্স তাও প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে এই দাবি প্রকাশ নিয়ে সন্দেহ এবং টুইটের উৎস নিয়ে কথা বলেছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘আমরা সাইট-এর কাছ থেকে আইএস-এর দাবির পক্ষে মূল টুইট বার্তার উৎস জানতে চেয়েও জানতে পারিনি। একাধিকবার সাইট-এর কো-ফাউন্ডার রিটা কাৎসকে ই-মেইল করেও জবাব পাইনি। তবে এর আগে একাধিক ঘটনায় বিশেষ করে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার নামে দায় স্বীকার করে ই-মেইলে যে সব বিবৃতি দেয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশ থেকেই দেয়া হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাদের পক্ষে টুইটও করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। কারা টুইট করেছে তা চিহ্নিত করা গেলেও আমরা তাদের আটক করতে পারিনি।’
এদিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অফিশিয়াল কনসালটেন্ট হিসেবে ২০১২ সাল থেকে কাজ করছেন আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। তিনি ২০১২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলা এবং হত্যা নিয়ে দায় স্বীকার করে যেসব ই-মেইল, ফেসবুক এবং টুইট বার্তা প্রকাশ হয়েছে তার সবগুলো নিয়েই কাজ করেছেন। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দায় স্বীকার করে যেসব টুইট, ফেসবুক এবং ই-মেইল বার্তার কথা বলা হচ্ছে তার মূল উৎস হল ‘আত তামকিন’ নামে একটি ব্লগ সাইট। সিঙ্গাপুরে তাদের একটি সার্ভার আছে। কিন্তু যারা এই ওয়েব সাইটে বার্তা আপলোড করেন তাদের অবস্থান গুলশান এবং পুরনো ঢাকায়। আমরা এর আগের বার্তাগুলোর উৎস দেখতে পেয়েছি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা।’
তিনি আরো জানান, ‘আমরা এরই মধ্যে এই গ্রুপগুলো একই না আলাদা তা নিয়েও কাজ করছি। শিগগিরই তা নিশ্চিত হতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘ই-মেইল, ফেসবুক এবং টুইট বার্তার উৎসও বাংলাদেশ। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে দেশের বাইরে থেকে এসব বার্তা আসেনি।’
এদিকে গত সপ্তাহে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ-এর কো ফাউন্ডার রিটা কাৎস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উচিত হবে সত্য স্বীকার করে নেয়া। তিনিও দায় স্বীকারের উৎস হিসেবে ‘আত তামকিন’ নামের ওয়েব সাইটটির কথা উল্লেখ করেন।’
প্রসঙ্গত, ‘আত তামকিন’ একটি বাংলা ওয়েব সাইট।
মন্তব্য চালু নেই