হাটু পানির নিচে চট্টগ্রামের অনেক এলাকা
বৈশাখের প্রথম ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নিচু এলাকা। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে হাটু পরিমাণ পানি জমে থাকায় কার্যত বন্ধ রয়েছে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল। নিচু এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে চট্টগ্রামবাসী। বৃষ্টির জন্য জলমগ্ন হয়ে পড়ায় নগরবাসীর পথচলাও হঠাৎ থমকে গেছে। রোববারের বৃষ্টিতে এ দুর্ভোগে পড়েন চট্টগ্রামবাসী।
নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও এসব কোনো কাজেই আসেনি এ সমস্যা নিরসনে। ফলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি নগরবাসী।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস কর্মকর্তা মেঘনাদ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৪৯ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি একটানা বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে।’
প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, মৌসুমের প্রথম ভারি বর্ষণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়াতে আটকা পড়েছে শত শত কর্মজীবী মানুষ। হাটু পানি ডিঙিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে সবাইকে। নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বাড়াইপাড়া, বাদুরতলা, ঘাসিয়ারপাড়া, চকবাজার, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, সুন্নিয়া মাদরাসা রোড, চানমিয়া সওদাগর রোড, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর আবাসিক এলাকা, হালিশহর জেলেপাড়া, পাঠানটুলি, বাকলিয়া, ডিসি রোডসহ নগরীর অধিকাংশ স্থান তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ভোগ্য পণ্যের দেশের প্রধান পাইকারি বাণিজ্য কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জও।
এসব এলাকায় বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠে। বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজারে জলাবদ্ধতা ডিঙিয়ে চলতে গিয়ে সড়কের ওপর অনেক যানবাহন বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে যানজটও সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়াতে বেশ বিপাকে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
সকাল থেকে মুরাদপুর এলাকায় পানির মধ্যে আটকা থাকা সাংবাদিক গাজী ফিরোজ শিবলী বলেন, ‘মোটর সাইকেল নিয়ে সকাল থেকে মুরাদপুরে আটকে রয়েছি। পানির জন্য কোথাও মুভ করতে পারছি না। এভাবে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানিনা।’
তার মতো শত শত মানুষ মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও ২ নম্বর গেটে এভাবে আটকে আছে বলে জানান ফিরোজ শিবলী।
একইভাবে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফ্যাক্টরিতে পানি ঢুকে পড়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নগরীর পাহাড়লতলী থানার ১২ কোয়াটার এলাকার রাজু আচার্য।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে হালিশহর, পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানি কোথাও যাওয়ার সুযোগ না থাকায় আমার গার্মেন্টস একসোরিস কাখানায়ও ঢুকে পড়েছে। তাই পানি ডিঙিয়ে কর্মচারিরা আসলেও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ‘জলবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন আগে থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে। এরপরও মৌসুমের প্রথম বর্ষণে এই জলাবদ্ধতার কারণ নিরুপণে মেয়রের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সকল নালা-নর্দমা পরিস্কার করা হবে।’
মন্তব্য চালু নেই