হাইপারটেনশন থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে
হাইপারটেনশন :
ব্লাড প্রেসার (Blood pressure) নামে অতিপরিচিত রোগটিই আসলে হাইপারটেনশন। হাইপারটেনশন রোগটি সকলের না থাকলেও সুস্থ্ অসুস্থ প্রতিটি মানুষেরই ব্লাড প্রেসার থাকে। আসলে হৃদপিন্ড রক্তকে ধাক্কা দিয়ে ধমনীতে পাঠালে ধমনীর গায়ে যে প্রেসার বা চাপ সৃষ্টি হয় তাই হলো ব্লাড প্রেসার। এই চাপ এর একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে আর যখন তা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনি তাকে বলা হয় হাইপারটেনশন (Hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ।
স্বাভাবিক প্রেসার :
ধরে নেয়া হয় পূর্ণ বিশ্রামে থাকা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেসার হবে ১২০/৮০ মিলি মিটার পারদ চাপ। এক্ষেত্রে ১ম সংখাটি (১২০) দ্বারা হার্ট এর সংকোচনের সময় ধমনীর ব্লাড প্রেসার এবং ২য় সংখাটি দ্বারা হার্ট এর প্রসারণের সময়ে ধমনীর ব্লাড প্রেসার কে নির্দেশ করা হয়। এই ১ম প্রেসার সংখাটি যা সিস্টোলিক প্রেসার নামে ডাকা হয় সবসময়ই ২য় টি থেকে বেশি এবং এর স্বাভাবিক মাত্রা ১৪০ মি.মি এর নীচে এবং ৯০ মি.মি এর উর্ধে । অন্য দিকে ২য় প্রেসার সংখাটি কে ডায়াস্টোলিক প্রেসার ডাকা হয় এবং এর স্বাভাবিক মাত্রা ৯০ মি.মি এর নীচে এবং ৬০ মি.মি এর উর্ধ্বে। তাই যখন উপরের প্রেসার টি ১৪০ বা তার উর্ধ্বে অথবা নীচের প্রেসার টি ৯০ বা তার উর্ধ্বে পাওয়া যায় তখন ধরে নিতে হবে রোগীর ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক এর উর্ধ্বে অর্থাৎ তিনি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগে ভুগছেন। তবে বয়সের উপর ভিত্তি করে এই মাত্রার কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
রোগের কারণ :
হাইপারটেনশন রোগের শতকরা ৯৫ ভাগ কারণই বলতে গেলে এখনো সঠিকভাবে জানা হয়ে উঠেনি এবং একে বলা হয় এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন। বাকী ৫% হলো সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন এর মধ্যে কিছু আছে কিডনির রোগ, কিছু হরমোনের সমস্যা জনিত রোগ তাছাড়া ধমনীর রোগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং গর্ভাবস্থাও এর জন্য দায়ী হতে পারে।
লক্ষণ :
রোগের প্রাথমিক অবস্থায় অনেক সময়ই রোগীর কোনো অভিযোগ থাকেনা। তবে কিছু রোগী মাথার পিছনের দিকে ব্যথা, বেশি প্রসাব হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ ঘেমে যাওয়া, বুক ধড়ফর করা ইত্যাদি উপসর্গ অনুভূত হতে পারে। ব্লাড প্রেসার খুব বেশি হলে উপসর্গ ও বৃদ্ধি পেতে পারে। দীর্ঘ দিন ব্লাড প্রেসার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং সেই জাতীয় সমস্যা নিয়েও রোগী অসুস্থ হতে পারেন।
রোগ নির্ণয় :
ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দিয়ে মাপলে কারো প্রেসার যদি বেশি পাওয়া যায় সেটাই হাইপারটেনশন নির্ণয় করার জন্য যথেস্ট। তবে দীর্ঘ দিন অনিয়ন্ত্রিত হাইপারটেনশন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকলে সে সকল অঙ্গের কার্যকারিতা দেখার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
জটিলতা :
অনিয়ন্ত্রিত হাইপারটেনশন ষ্ট্রোক, এনকেফালোপ্যাথি, চোখের রেটিনার প্রভুত ক্ষতি সাধন ও অন্ধত্ব, হৃদপিন্ডের দেয়ালের পুরুত্ব বাড়ানো, হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলর, কিডনী ফেইলরসহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
চিকিৎসা :
হাইপারটেনশন চিকিৎসার প্রথম স্তরটিই হলো জীবনযাত্রার ধারা পরিবর্তন করা। এর মধ্যে আছে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা যেমন খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনা, অতিরিক্ত শর্করা বা চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া, ধুমপান বা অ্যালকোহলের অভ্যাস থাকলে তা সম্পুর্ণরুপে ত্যাগ করা, শরীরের বাড়তি ওজন কমানো, ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা, নিয়মিত হাল্কা শরীরচর্চা করা, উপাসনা বা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। অনেক সময় শুধু এইসব পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমেই হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর পরেও যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় সেক্ষেত্রে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া লাগতে পারে। কার্ডিওলজিস্টগণ সাধারণত ডায়েরুটিক্স, বিটা ব্লকার, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, এসিই ইনহিবিটর, এআরবি ব্লকার, আলফা ব্লকার বা মস্তিস্কের কেন্দ্রে কাজ করে প্রেসার কমানোর এমন অসুধাগুলো বিভিন্ন মাত্রায় রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যবহার করে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করেন।
তথ্যসূত্র : susastho.com
মন্তব্য চালু নেই