হলি আর্টিজান থেকে উদ্ধার হওয়া সবাই নজরদারিতে
গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর যৌথবাহিনীর চালানো অপারেশন থান্ডারবোল্টে উদ্ধার হওয়া সবাইকে নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দারা। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাদের কাছ থেকেও জঙ্গিদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মধ্যে যাদের আচরণ ও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়েছে তাদেরই বেশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলেও জানান তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গুলশান হামলার সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ আর সহযোগীদের ধরতেই একইসঙ্গে বিরামহীন অভিযান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। ১ জুলাই জঙ্গি হামলার পর থেকে পরদিন সকালে যৌথবাহিনীর অভিযান চলার সময় পর্যন্ত পাঁচ বিদেশিসহ ৩২ জনকে উদ্ধার করা হয় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট ও আশপাশের এলাকা থেকে। বিদেশিদের মধ্যে দুই জন শ্রীলঙ্কান, দুইজন ইতালিয়ান এবং একজন জাপানি নাগরিক রয়েছেন। উদ্ধার হওয়া বিদেশিদের কাছ থেকেও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জঙ্গিদের হামলা ও আচরণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দারা জানান, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনজনকে রেখে অন্য সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম, ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ হাসিব খান ও হলি আর্টিজানের বাবুর্চির সহকারী জাকির হোসেন শাওনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে শাওন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ৮ জুলাই মারা যায়।
জানা গেছে, উদ্ধারের পর বেশ কয়েকদিন গোয়েন্দা হেফাজতে থাকা হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানের ওপরই গোয়েন্দাদের সন্দেহ বেশি। ফুটেজে তাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে বলেও জানান গোয়েন্দারা। কিন্তু জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের অস্ত্র তুলে দিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে তারা দাবি করেছেন।
এ দু’জনকে গোয়েন্দা হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি এর আগেও জানিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। কিন্তু গত শুক্রবার হাসনাত করিম ও তাহমিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান।
তবে গুলশান হামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটি) ভারপ্রাপ্ত উপ কমিশনারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তার কাছেও কোনও তথ্য নেই। তারা কোথায় আছেন সেটাও জানেন না বলে জানান তিনি। তবে এ দু’জনের স্বজনদের দাবি, হাসনাত ও তাহমিদ গোয়েন্দা হেফাজতেই রয়েছেন।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটি) ভারপ্রাপ্ত উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, গুলশান হামলার তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে তারা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। গুলশান এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও বাসা-বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনই বলার মতো কোনও অগ্রগতি হয়নি বলেও জানান তিনি।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাগুলো এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। একইসঙ্গে বিদেশি কয়েকটি বন্ধুরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও গুলশান হামলার ঘটনায় দেশের গোয়েন্দাদের প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই শুক্রবার রাতে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাৎক্ষনিকভাবে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোড়া বোমা ও গুলিতে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রবিউল করিম।এছাড়াও ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন যৌথবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন। যাদের একজন হলি আর্টিজানের শেফ সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জাকির হোসেন শাওন।
মন্তব্য চালু নেই