ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি নিয়েই শুরু হল বাণিজ্য মেলা

হরতাল-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘হরতাল-নৈরাজ্য অর্থনৈতিক উন্নতি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ব্যহত করে। সে কারণে সব ধরনের নৈরাজ্য, সহিংসতা এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বুধবার রাজধানীর বিজয় নগরে ২০তম আন্তর্জাতিক মেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি এ আহ্বান জানান। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় অঙ্গীকার করে বলেন, ‘চলমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছুতে সরকার সবধরনের সহযোগিতা দেবে। এই লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও পোশাক মালিক ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে তার বাস্তবায়ন সম্ভব।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে আপনারা ভয়াবহ নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস প্রত্যক্ষ করেছেন। মাত্র দুইদিন আগে তারা একজন শিক্ষককে হত্যা করেছে। আরেকজন শিক্ষক ও তার সন্তানের ওপর পেট্রোল বোমা ছুঁড়েছে। তারা গুরুতর আহত হয়েছেন। এ কারণে নৈরাজ্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আপনাদের প্রতি অনুরোধ জানাই আমি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ সহিংসতা পছন্দ করেন না। তারা উন্নয়ন ও শান্তি চায়। সরকার জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ‘নতুন জানালা’ খুলে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং সরকার বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন নতুন কৌশল নিয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন বাজার খোঁজা হচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্যের এই যুগে কঠিন বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকবার ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নে অবকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। আগামী জুনের মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের চার লেনের নির্মাণ সম্পন্ন হবে। পরে এটি ছয় লেনে করা হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি নিয়েই শুরু হল বাণিজ্য মেলা

PM-BANIJJO-MALA ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি নিয়েই শুরু হল বাণিজ্য মেলা ব্যবস্থাপনার ঘাটতি নিয়েই শুরু হল মাসব্যাপী ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৫। মেলার প্রবেশ গেট থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছুতে অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

মেলার প্রবেশ পথে সাংবাদিকদের হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রথমে অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল না। পরে অনেকের টিকেট কেটে ঢুকতে হয়েছে।

গেটে কর্মরতরা জানায়, শুধুমাত্র ইত্তেফাক, প্রথম আলো, চ্যানেল আইসহ কয়েকটি পত্রিকা ও চ্যানেলের সাংবাদিকদের পাস দেয়া হয়েছে।

অনলাইনের নাম শুনে তারা বলেন, ‘বড় বড় পত্রিকার সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না আর আপনারা তো অনলাইন সাংবাদিক।’

কিন্তু রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যুগ্ম সচিব এএফএম মনজুর কাদির বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকদের কোনো পাস লাগবে না। শুধু আইডি কার্ড প্রদর্শন করলেই তাদের ঢুকতে দেয়া হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গেটপাস ছাড়া সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

এছাড়াও মেলায় নিরাপত্তা বিষয়ে ঘাটতি দেখা গেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ২০০ সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা থাকলেও হাতের গোনা কয়েকটি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

মেলার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অস্থায়ী সচিবালয়ের ভেতরেও নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকের ল্যাপটপসহ ব্যাগ চুরি হয়েছে।

যদিও মেলা শুরু হওয়ার আগে ইপিবির যুগ্ম সচিব বলেছিলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আগের তুলনায় বেশ জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য মেলায় আগত দর্শনার্থী ও স্টল মালিকদের নিরাপত্তায় ৮০টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি টিভি) স্থাপন করা হচ্ছে। কোনো অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধানে মেলা প্রাঙ্গণে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া আনসার, পুলিশ, র‌্যাব মেলা প্রাঙ্গণ ও বাইরে সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে। থাকছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ সব উপকরণ।’

নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে শেরে বাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদারে তৎপর। তবু কীভাবে যেনো একটি ব্যাগ চুরি হয়ে গেয়ে, বলতে পারছি না।’

প্রথম দিনে এক দর্শনার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘খাবারের স্টলে খেতে গিয়েছিলাম। একটা বার্গার নিয়েছি, খেতে গিয়ে দেখি তা নষ্ট হয়ে গেছে।’

এদিকে বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। অনেককেই স্টল সাজানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

এর মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক জোন প্যাভিলিয়নে দেখা গেছে তাদের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।

প্যাভিলিয়নের ম্যানেজার আসিফ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কিছু কাজ বাকী আছে। আশার করি দুএকদিনের শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া মেলার প্রথম দিকে তেমন জমে না। তাই আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ১৪ দেশের ৪৮টি প্রতিষ্ঠান থাকছে।

এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি নতুন দেশ হিসেবে অংশ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে থাকছে ৫০০টি স্টল।

মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশমূল্য ধরা হয়েছে।
ভিআইপিদের আসা-যাওয়ার জন্য পৃথক গেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে।



মন্তব্য চালু নেই