হতাশায় কূটনীতিকরা

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকারি দল ও বিএনপির পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় হতাশ ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা।

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সংকট নিরসনে রাজনীতিবিদরা কোন পথ খুঁজে বের করতে না পারায়, এ ব্যাপারে নিজেরাই উদ্যোগ নেন ঢাকায় নিযুক্ত ১৬টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূত।

এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা সংকট নিরসনে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলই তাদের দেওয়া প্রস্তাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে হতাশা নিয়ে এ উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার ব্যাপারে কিছুটা ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছেন তারা।

এদিকে সংকট নিরসনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় এ ব্যাপারে আপাতত কোন আশাও দেখছেন না কূটনীতিকরা। ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা দেশের এসব কূটনীতিকদের মধ্যে রয়েছেন- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কোরিয়া, নরওয়ে, স্পেন ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, সরকারি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকে সহিংসতার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি, সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহবান জানান কূটনীতিকরা। এই বৈঠকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় সংলাপের পরিবেশের জন্য বিএনপিকে হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

কূটনীতিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, সহিংসতা চলাকালে কোন সংলাপ হবে না। এ সময় কূটনীতিকরা সকল পক্ষকে সংযম রক্ষা করতে এবং স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর সুযোগ সৃষ্টির আহবান জানান। তারা পরস্পরের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ারও আহবান জানান।

অন্যদিকে সংকট নিরসনে সংলাপের ওপর বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিএনপি জোট। এ অবস্থায় সংলাপের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন এসব কূটনীতিকরা।

জানা গেছে, বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানান কূটনীতিকরা। সেই সঙ্গে সংকট নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ চালানোর লক্ষে কিছুদিন হরতাল-অবরোধ বন্ধ রাখারও আহবান জানান তারা। খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনকে কূটনীতিকদের এই উদ্যোগের ফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জোরালো দাবি থেকে কিছুটা সরে এসে অনুরূপ কোন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে এই নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা কেমন হবে- তা নিয়ে সংলাপ হতে পারে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে হরতালের বিরতি দেওয়ার বিষয়ে কোন ঘোষণা না থাকায় কূটনীতিকরা তাদের সমঝোতার উদ্যোগের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকরা বরাবরই হাতাশার মধ্যে আছেন বলেও জানায় ওই সূত্র।

চলমান সংকট নিরসনে ১৬ কূটনীতিকের উদ্যোগ থেমে গেছে- এমনটি মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এবারের সংকট নিরসনে কূটনীতিকরা নিজেদের মতো করে উদ্যোগ নিতে চান। যাতে কোন রাজনৈতিক দল মনে না করে কূটনীতিকরা কোন বিশেষ দলের পক্ষ নিচ্ছেন। রাজনীতিকরাই যাতে সংকট সমাধানের সাফল্য নিতে পারেন সেটিই আশা করছেন কূটনীতিকরা। তবে কূটনীতিকদের উদ্যোগের ফলাফল দৃশ্যমান হতে আরো সময় লাগবে।’

চলমান সংকট নিরসনে কূটনীতিকদের উদ্যোগ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন এ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।



মন্তব্য চালু নেই