হঠাৎ চাকরি নেই ১০০০ গেটম্যানের
দীর্ঘ ১৫ বছর রেল ক্রসিংএর হাতল ধরে রেল চলাচলের সময় সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিয়ে এসেছেন তিনি। অল্প বেতন তবু নুনভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য পেশাটাকে নিয়েই চলতো তার জীবন। পরিবারের মুখে তুলে দিতে পারতেন দুই মুঠো খাবার।
কিন্তু হঠাৎ রোববার সকালে জানতে পারেন তার এতদিনের চাকরিটা আর নেই। রেল কর্তৃপক্ষ গেটম্যান হিসেবে স্থায়ী লোক নিয়োগ দিয়েছে। বেঁচে থাকার একমাত্র পেশাটি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর সিটি বাইপাস রেলক্রসিংএর গেটম্যান দীপু।
শুধু দীপু নয় মহানগরীর রেল ক্রসিংএর ৯টি ইঞ্জিনিয়ারিং গেটের অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ২৬ জনসহ পশ্চিম রেলের ১৯০ জন গেটম্যানের একই দশা। আগে থেকে কোনো কিছু না জানিয়েই তাদের চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে হঠাৎ চাকরি হারানো গেটম্যানের এ সংখ্যা ১,০০০ জনের বেশি। চাকরি ফিরে পেতে অল্পদিনে আন্দোলনে নামতে যাচ্ছেন ভূক্তভোগীরা।
গেটম্যান দীপু জানান, ২০০০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রেল দৈনিক মজুরিভিত্তিতে তাদের গেটম্যানের চাকরি দেয়। সে থেকে আজ পর্যন্ত দীপু সেই চাকরি করে আসছেন। তার মাসিক বেতন মাত্র ২৪০০ টাকা। সে টাকায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি চাকরিটি করে এসেছেন। কোনো মাসে বেতন পেয়েছেন আবার কোনো মাসে ওই অল্প টাকাটাও পান নি। এখনো ২৩ মাসের বকেয়া বেতন পাবেন তিনি। চলতি দুই মাসেরও বেতন পাননি তারা।
গেটম্যান দীপু অভিযোগ করেন, চাকরি করা অবস্থায় অনেকেই ক্ষমতায় এসেছে। অনেক মন্ত্রী তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের আশ্বাসের বাণী শুনতে শুনতে কিছু পাওয়ার আশায় পেশাটি ছেড়ে অন্য কিছু করার চিন্তা মাথায় আসেনি। দীর্ঘ ১৫ বছর চাকরি করে হঠাৎ করে বাদ দেয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।
দীপু আরো জানান, শনিবার সকালে তিনি যে রেলক্রসিংএ চাকরি করেন সেখানে রেলের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তি এসে বলেন তাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগে তাদের কিছু জানানোই হয় নি।
দীপু ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমি কোনোভাবেই রেলক্রসিং এর গেট ছাড়বো না। যদি রেল কর্তৃপক্ষ এতে আমাকে পুলিশে দেয় তাতেও আপত্তি নেই। আমি এ পেশা নিয়েই বাঁচতে চাই। তা না হলে তো আমাকে ও আমার পরিবারকে না খেয়ে মরতে হবে। মঙ্গলবার সকালেও রেলের লোক তার গেটে এসে উপস্থিত হলেও তিনি গেট ছাড়েননি।
নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিং এ কর্মরত রানা, সম্রাট, রাইপাড়া সিটি বাইপাস রেলক্রসিংএর বেলাল, আশরাফ জানান, হঠাৎ চাকরি হারিয়ে তারা পরিবারসহ অসহায় হয়ে পড়েছেন। কীভাবে দিন পার করবেন এ নিয়ে তারা কিছুই ভাবতে পারছেন না।
পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) খাইরুল আলম জানান, যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তারা দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক। প্রতিদিনের বেতন অনুযায়ী তাদের অর্থ দেয়া হতো। কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে লোক নিয়োগ করেছেন। এখন তো তাদের বাদ দিতেই হবে।
আগে না জানানোর বিষয়ে জিএম খাইরুল বলেন, তারা কেউই রেল কর্তৃপক্ষের নিয়োগপ্রাপ্ত নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং গেটগুলোতে যারা ছিলো তাদের দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে রাখা হয়েছিলো। আগে জানানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো না।
মানবিক বিষয় বিবেচনার পশ্চিম রেলের জিএম বলেন, এটি শুধু পশ্চিম রেলের বিষয় নয়। সারা দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং গেটে স্থায়ী লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা দৈনিক মজুরিভিত্তিক ছিলো তাদের নিয়ে ভাববার কোনো অবকাশ নেই। বকেয়া বেতনের বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের বেতন বকেয়া আছে সেসব বকেয়া পরিশোধ করা হবে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
মন্তব্য চালু নেই