স্রষ্টার আম ১৮০ টাকা দাম!
গ্রামটির নাম প্রকাশনগর। তানোর উপজেলার মুণ্ডমালা পৌর এলাকায় অবস্থিত। গ্রামটির পাশেই একটি গোরস্থান। বছর চারেক আগে সেখানে লাগানো হয় অর্ধশত আমগাছ। প্রতিবছর মওসুম এলেই সে বাগানটি ভরে ওঠে আমের ভারে। কিন্তু বাগানের একটি গাছই কেবল ব্যতিক্রম। সারাবছর ধরে সেটিতে ঝুলে থাকে অনেক আম।
ওই গাছটি ঘিরে গ্রামবাসী ও আশপাশ এলাকার মানুষের কৌতুহলের যেন শেষ নেই। লোকজন গাছটিকে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ উপহার হিসেবে মনে করে। গাছটি থেকে তাই যখনই আম নামানো হয় তখনই শুরু হয় কাড়াকাড়ি। কে আগে ‘স্রষ্টার আম’ সংগ্রহ করবে এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
তবে এক পর্যায়ে গ্রামবাসী বসে সিদ্ধান্ত নেয় আর কাড়াকাড়ি নয়। গাছটির আম খাওয়ার উপযোগী হলে নামানোর আগে প্রকাশ্যে ডাক দেয়া হবে। যে বেশি দাম হাকবে সেই পাবে আম। বর্তমানে এভাবেই গাছটির আম বিক্রি হয়ে থাকে। আর এতে একটি আমের দাম উঠে যায় ৮০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। আম বিক্রির অর্থ মসজিদের উন্নয়নে কাজে লাগানো হয়।
সম্প্রতি গাছটি থেকে একটি আম নামনো হয়। আর প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে মাত্র ২৫০ গ্রাম ওজনের ওই আমটি বিক্রি করা হয় ১৮০ টাকায়।
গোরস্থানের ওই বাগান দেখাশুনা করেন গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, রোপণের দুই বছর পরে থেকেই গাছটিতে আম ধরা শুরু হয়। এরপর থেকে কোনো সময়ের জন্যই আমশূন্য হয়নি গাছটি। কোনো আম পরিপক্ক দেখা গেলে তো অন্যগুলো থাকে পরিপক্কের পথে। আবার দেখা যায় অন্য ডালে হয়তো মুকুল ধরে আছে।
জাহাঙ্গীর আলম আরো জানান, কাঁচা অবস্থায় খেলে আমগুলো মড় মড়ে মিষ্টি লাগে। আর পাকলে পুরো আমটি সিঁদুররঙা হয়ে সুগন্ধী ছড়ায়। খেতেও বেশ সুস্বাদু।
গ্রামবাসীরা সঠিক নাম না জানলেও দেখতে সুন্দর লম্বা সিঁদুররঙা আমটির নাম রেখেছে ‘সুন্দরী ভোগ’। একটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত।
তানোর উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমসের আলী জানান, আম গাছটির সংবাদ তিনি আগেই শুনেছেন। একবার সরেজমিন গিয়ে তিনি গাছটি দেখেও এসেছেন। গাছটির পাতা অন্য আমগাছের চেয়ে লম্বা। দেশে ২০০টির বেশি জাতের আম আছে। এতো জাতের ভিড়ে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না যে আমটি কোনো জাতের, নামই বা কী।
প্রকাশনগর গ্রামের প্রধান ও মসজিদের সভাপতি সামসুজ্জোহা জানান, চার বছর আগে গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তে গোরস্থানে ৫০টি আমের গাছ লাগানো হয়। গাছটির বয়স যখন দুই বছর তখন থেকেই গাছটিতে আম ধরে।
সামসুজ্জোহা আরো জানান, সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শুক্রবার করে পরিপক্ক আমগুলো নামানো হয়। জুমার নামাজের পর গ্রামের শত শত লোকের সামনে বিক্রির জন্য ডাক দেয়া হয়। যে বেশি দাম হাকে সেই পায়। এভাবে আমগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট গাছ হলেও দুই বছরে ওই গাছ থেকে ১০ হাজার টাকার আম বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে গাছে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনের ২৫ থেকে ৩০টি আম ঝুলে আছে।
মন্তব্য চালু নেই