সাতক্ষীরার কুল বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা

আমাদের দেশে সারা বছরেই বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করা হয়। কুল বা বরই হচ্ছে বাংলাদেশে অন্যতম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি কুল চাষ হয়। তবে রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল,সাতষক্ষীরা, বগুড়া, ময়মনসিংহে ভালো ও উন্নত জাতের কুল, বরই বা বড়ই চাষ হয়।

কুল বা বরই পাকা ও টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়। এছাড়া কুল বা বরই দিয়ে চাটনি, আচার ও নানান মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। কুল বা বরই খেতে সুস্বাদু। তাই ছোট বড় সবার কাছেই এই ফলটি প্রিয়। আমাদের দেশে অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কুল চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। এর মধ্যে কুমিল্লা কুল, সাতক্ষীরা কুল, রাজশাহী কুল, আপেল কুল, বাউ কুল উল্লেখযোগ্য।

এদিকে, ভালো ফলন আর দাম ভালো পাওয়ায় সাতক্ষীরায় কুল বড়ইয়ের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ করে এ জেলার প্রান্তিক কৃষকরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কুল চাষের উপযোগী হওয়ায় চাষীরা উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে এর আবাদ।

সাতক্ষীরা জেলার উৎপন্ন বিষমুক্ত কুল খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে শত শত মন কুল চলে যাচ্ছে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মূলত ২০০০ সালের পর থেকে এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয়। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য ফসল উৎপাদন কমিয়ে এ জেলার শত শত কৃষক কুল চাষ শুরু করেছে। ধান-পাট ও অন্যান্য রবিশস্য উৎপাদন করে বিঘাতে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাভ করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কিন্ত বাউকুল, আপেলকুল, তাইওয়ানকুল, নারিকেলী কুল, ঢাকা নাইনটিসহ বিভিন্ন জাতের কুল চাষে বিঘাপ্রতি খরচের দ্বিগুণ টাকা লাভ করা সম্ভব।

কুলচাষীরা জানায়, জেলায় বিষমুক্ত কুল উৎপাদনের জন্য কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করেছে কম্পোজ সার। এতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপশি চাহিদাও বেড়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা আগাম টাকা দিয়ে কুল বাগান কিনতে শুরু করেছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ জেলার সদর উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে, তালা উপজেলায় ১৫৫ হেক্টর জমিতে, দেবহাটা উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে, আশাশুনি উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে, শ্যামনগর উপজেলায় ২৫ হেক্টরসহ মোট ৪৯০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে।

জেলার কয়েক জন কুলচাষী জানান, প্রতি বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে প্রতি বিঘা কুল বিক্রি হবে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তাদের বাগানে প্রতি দিন ১২-২০ জন শ্রমিক দৈনিক কাজ করে। কুলচাষীদের দাবি সরকার যদি তাদের কৃষি অফিসের মাধ্যমে কুলচাষে উদ্বুদ্ধকরণ সভা সেমিনার এবং সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে কুল চাষে সহযোগিতা করে তাহলে তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। বিদেশে বিপনন করতে পারলে কুলের দাম বাড়বে।

এছাড়া অন্য জেলার মতো সাতক্ষীরায় সব ধরনের বরই গাছ জন্মে। বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝাঁকড়া ধরনের বৃক্ষ। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাছে ফুল আসে এবং ফল ধরে শীতকালে। কাঁচা ফল সবুজ। তবে পাকলে হলুদ থেকে লাল রং ধারণ করে। কাঁচা ও পাকা দু ধরনের বরই-ই খাওয়া যায়। স্বাদ টক ও টক-মিষ্টি ধরনের। তবে কুল বরই মিষ্টি হয়। বরই শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। কাঁচা ও শুকনো বরই দিয়ে চমত্কার চাটনি ও আচার তৈরি করা যায়।

ধান গমের পাশাপাশি প্রচুর খাদ্য-শস্য এখন দেশে উৎপাদিত হয়। কুল,বরাই কিংবা বড়ই এমনি একটি সুস্বাদু, মিষ্টি ও পুষ্টিকর ফল। দেশের মানুষের বিকল্প খাদ্য হিসাবে পুষ্টির পূরণে অনেকটা সহায়ক হবে কুল। তারপর বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।



মন্তব্য চালু নেই