স্মৃতির টানে পুরনোরা, শাহরুখ-কাজলে নতুনরা
পাশাপাশি দুই হলের একটিতে দর্শকদের দীর্ঘ লাইন, অন্যটির সামনের চত্বর খাঁ খাঁ। একই শহরের দুই হলের একটি দর্শকপূর্ণ, অন্যটিতে চেয়ারগুলো ফাঁকা। এক প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপকের চোখে ঝলমলে আশা, অন্য প্রেক্ষাগৃহের কর্তাব্যক্তিটির কণ্ঠ হতাশায় ভার।
ভারতের বিভিন্ন গ্রেক্ষাগৃহের শুক্রবারের দৃশ্য এগুলো। হলগুলোতে শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ-কাজলের ‘দিলওয়ালে’ এবং রণবীর সিংহ ও দীপিকা পাড়ুকোনের ‘বাজিরাও মাস্তানি’। মুক্তির প্রথম দিনেই ‘বাজিরাও মাস্তানি’কে দৃষ্টিসীমার বাইরের দূরত্বে পেছন ফেলল ‘দিলওয়ালে’।
১৯৯৫ সালে দিলওয়ালা বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল দুলহানকে। কুড়ি বছর পর আবার ফিরে এল দিলওয়ালা। সেই কুড়ি বছর আগে যারা ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র প্রেমে পড়েছেন, এখন তাদের স্মৃতিকাতর করছে ‘দিলওয়ালে’। তারা হলে ছুটছেন স্মৃতির টানে।
মাঝবয়সী দর্শকদের অনেকে জানালেন, ‘দিলওয়ালে’ ছবিটি কী নিয়ে তা না জেনেই তারা চলে এসেছেন শুধু পুরনো স্মৃতিতে জল দিতে।
‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র রাজ ও সিমরনের মতোই তখন প্রেমে হাবুডুবু ছিলেন বোলপুরের দুই কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। তারা এখন সংসারী। তখনকার মতোই এই এখনো ‘লুকিয়ে’ এসে ছবিটি দেখে গেলেন তারা। স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন স্বামী (সেই তরুণ)। বাসায় এসে মেয়ের থেকে লুকিয়ে চলে এসেছেন হলে।
বোঝা গেল স্মৃতির টান উপেক্ষা করতে পারছেন না পুরনো দর্শকরা; কিন্তু নতুন প্রজন্ম ছুটে আসছে কেন?
তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, শাহরুখ-কাজল জুটি নিয়ে কোনো পিছুটান তৈরি না হলেও এই জুটির নামমহিমাই হলে টেনে এনেছে নতুন প্রজন্মের দর্শকদের।
ফলে শনৈ শনৈ করে নতুন-পুরনো দর্শক বাড়ছে দিলওয়ালের হলগুলোর প্রতিটি শোতে। আর কেবলই পেছনে পড়ছে ‘বাজিরাও মাস্তানি’।
বোলপুরের চিত্রা সিনেমা হলে চলছে ‘বাজিরাও মস্তানি’। হলটির ম্যানেজার কাশীনাথ প্রসাদ জানান, দিনে চারটি শো হচ্ছে। প্রথম দিন প্রথম শোতে দর্শক ছিল ২৪ জন। পরের শোতে মেরেকেটে ১৪ জন। খাঁ খাঁ করছে ৫৮০ আসনের হলটি। পরের শোগুলো কেমন চলবে ভেবে আতঙ্কিত কাশীনাথবাবু।
অন্যদিকে গীতাঞ্জলির ম্যানেজার তথাগত সিংহরায় জানান, সেখানে ‘দিলওয়ালে’র শো চলছে দিনে তিনটি। প্রথম শোতেই হলের প্রায় অর্ধেক আসন ভরে গিয়েছিল। বেলা যত বেড়েছে, টিকিটের চাহিদা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। ৭৫০ আসনের এই হলে ‘দিলওয়ালে’র বাকি দুটি শো ইতিমধ্যেই হাউসফুল। পরিস্থিতি এমন, ম্যানেজারের কাছে এসে উৎসাহীরা আবদার করছেন চেয়ার পেতে হলেও ছবিটি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার।
জেলা সদর সিউড়িতে ১০০ ফুটের মধ্যে পাশাপাশি দুটি হল। তার মধ্যে বীরভূম টকিজে ‘বাজিরাও মস্তানি’, চৈতালী টকিজে ‘দিলওয়ালে’। বীরভূম টকিজের মালিক আবীর চট্টোপাধ্যায় জানান, ৭০০ আসনের হলটিতে প্রথম শোতে দর্শক ছিলেন ২৩ জন, পরের শোতে ৩৫ জন। তৃতীয় শোতে সংখ্যাটা নেমে একেবারে ১৫তে ঠেকে। আবীরের মতে, ‘দিলওয়ালে’ ছবিই যাবতীয় ভিড় টেনে নিয়েছে।
রামপুরহাটের একমাত্র হল মাম্পি টকিজে মুক্তি পেয়েছে ‘দিলওয়ালে’। সেখানেও রমরমিয়ে ব্যবসা করছে ছবিটি। রামপুরহাটে অবশ্য দেখা গেল কমবয়সীদের ভিড়ই বেশি। সেই দর্শকদের মধ্যে কট্টর শাহরুখ ফ্যান দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সইফ আলি জানাল, ‘‘শাহরুখকে দেখতে এসেছি। জুটিকে নয়।’’
সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’তে রণবীর সিংহ ও দীপিকা পাড়ুকোন জুটির মধ্যেও মশলা ছিল তরুণ প্রজন্মকে হলে টেনে আনার। কিন্তু তাকে পেছনে ফেলে দিলওয়ালের সাফল্যের রহস্যের আঁচ পাওয়া গেল মধ্যবয়সী এক দর্শকের কথায়। ‘দিলওয়ালে’ দেখে হল থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘‘শাহরুখ ও কাজলের রসায়নটা সেই আগের মতোই রয়ে গেছে।”
মন্তব্য চালু নেই