স্বপ্রকাশিত জার্নালে লিখে পদোন্নতি জবি শিক্ষকদের

উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উঠলেই সামনে চলে আসে গবেষণার বিষয়টি। এই বিদ্যাপীঠে প্রতিনিয়ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হবে, উদঘাটিত হবে নতুন নতুন জ্ঞানের, বিশ্বব্যাপী এটাই প্রচলিত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য জুড়ে দেয়া হয়েছে স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের শর্ত।

কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অনেক বিভাগে সেই রীতি মানা হচ্ছে কমই। ওই সব বিভাগের শিক্ষকদের আগ্রহ নেই গবেষণায়। তাই বলে বন্ধ নেই পদোন্নতি। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছেন নিজ উদ্ভাবিত পদ্ধতি।

পদোন্নতির শর্ত পূরণ করতে তারা প্রকাশ করছেন বিভাগভিত্তিক জার্নাল। স্বপ্র্রকাশিত এসব জার্নালে প্রবন্ধ ছাপিয়ে হরহামেশা মিলছে পদোন্নতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগ ও আপগ্রেডেশন নীতিমালা-২০১৫ এর পরিশিষ্ট-৭ এর ক এবং খ-তে উল্লেখ আছে- সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেতে স্বীকৃত জার্নালে ন্যূনতম একটি প্রকাশনা থাকতে হবে। সহযোগী অধ্যাপকের জন্য চারটি এবং অধ্যাপক হওয়ার জন্য ন্যূনতম দশটি প্রকাশনা থাকতে হবে স্বীকৃত জার্নালে।

অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতির জন্য শিক্ষকরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বা মানসম্মত কোনো জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ না করেই পদোন্নতি নিচ্ছেন। আর এ ক্ষেত্রে কাজ করছে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ও লবিং। ফলে গবেষণা ক্ষেত্রে মৌলিক কোনো ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে না জবিতে। সীমাবদ্ধ থাকছে প্রথাগত জ্ঞানে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জবির ইসলামিক স্টাডিজ, মনোবিজ্ঞান ও আইন বিভাগ তাদের নিজস্ব উদ্যোগে বের করে থাকে জার্নাল। সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরাই এর লেখক, প্রকাশক ও মডারেটর। এসব জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে চলছে পদোন্নতির কার্যক্রম। অবশ্য এর বৈধতা নেওয়া হয়েছে আপগ্রেডেশন সংক্রান্ত নীতিমালার পরিশিষ্ট-৭(খ)-এর মাধ্যমে। ৭ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ আছে- “স্বীকৃত জার্নাল বলতে সংশ্লিষ্ট অনুষদীয় সভা কর্তৃক সুপারিশকৃত এবং একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত জার্নালসমূহকে বোঝাবে”।

নিজেদের প্রকাশিত জার্নালকে এর আওতায় এনে গবেষণায় অনাগ্রহ ও সুবিধাবাদী শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ করে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, গবেষণার মান নির্ধারণের জন্য দেখতে হবে কোন কোন জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণত মানসম্মত নিখুঁত গবেষণা প্রবন্ধগুলো ইমপেক্ট ফ্যাক্টরযুক্ত এবং আইএসআইভুক্ত জার্নালগুলোতে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এসব প্রকাশনা নিয়ে কখনোই দেশীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকে না।

জবির প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্মকা- গতিশীল রাখতে একটি সেল রয়েছে। সেখানে গবেষণা প্রকল্প বাবদ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গবেষণা মঞ্জুরি বাবদ কোনো বরাদ্দ দেয়নি।

এ ব্যাপারে পরিচালক (গবেষণা) ড. শামীমা বেগম বলেন, “আমাদের এখানে শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ কম। তার ওপর রয়েছে আর্থিক সীমাবদ্ধতা। স্বল্প ফান্ডে রিসার্চ হয় না।” তবে রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, ইংরেজি, ফার্মাসি ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণায় আগ্রহ দেখা যায় বলে জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই