পাওয়া গেল সন্ধান

২মিলিয়ন বছর আগের পাখি যা ছিল মানুষের চেয়েও বড়!

উড়োজাহাজ আবিষ্কারের পরেও কিন্তু মানুষের মাঝে পাখি হবার বাসনা শেষ হয়নি। মানুষ পাখিকে তার স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে যুক্ত করেছে বহু আগে থেকেই। এযাবৎ যতগুলো প্রাচীন সাহিত্য বা মিথ পাওয়া যায় তাতে বিচিত্র কিছু প্রাণীর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এই বিচিত্র প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব পৃথিবীতে আদৌ ছিল কিনা তা নিয়ে বহুকাল গবেষকদের মাঝে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। তবে একটা সময় সবাই একমত হয়েছেন যে, বর্ণিত বিচিত্র প্রাণীদের মধ্যে অধিকাংশেরই অস্তিত্ব এই পৃথিবীতেই ছিল যা বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তেমনি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একটি পাখি তিতানিস, প্রাচীণ ভারতবর্ষের সাহিত্যে যাকে বলা হচ্ছে গরুড় পাখি।

অস্থিবিদেরা পৃথিবীর দক্ষিণাংশে অনেকগুলো বৃহদাকার পাখির ফসিল পেয়েছিলেন। প্রথমদিকে এই পাখিগুলোর নাম পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে নামগুলো জানা যায়। ওই প্রাপ্ত ফসিলগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ছিল তিতানিস পাখির। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর তৎকালীন অবস্থায় বসবাসকারী পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী এবং শিকারী পাখি ছিল তিতানিস। যে কারণে ধারনা করা হয়, এই পাখির উৎস মূলত উত্তর আমেরিকা হলেও, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর ফসিল পাওয়া গেছে।

তিতানিসদের বয়স এবং সঠিক বাসস্থল সম্পর্কে এখনও বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন। তবে একদল বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রায় দুই মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এই পাখির বিচরণ ছিল। কিন্তু টেক্সাসে যে ফসিল পাওয়া যায় তার কার্বণ ডেটিং করে দেখা গেছে যে তাদের বয়স প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর পুরনো। প্রাগৈতিহাসিক সময়কার বর্ননায় দেখা যায়, তিতানিস পাখি ছিল পক্ষীকূলের মধ্যে ভয়ঙ্কর শিকারী, যাদের ছিল শক্ত থাবাযুক্ত পা এবং ভারি ডানা। এরবাইরে এদের মস্তিস্কের হাড়ের গঠন ও তীক্ষ্ণ এবং ধারালো ঠোট অন্যান্য পাখিদের তুলনায় ভিন্ন ছিল। আর এই কারণেই উত্তর আমেরিকার অনেক বিজ্ঞানী তিতানিসকে পাখি না বলে ডায়নোসর গোত্রীয় বলেও আখ্যা দেন।

বিজ্ঞানীদের দাবি এক একটি তিতানিসের উচ্চতা ছিল প্রায় আট ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা এবং প্রায় দেড়শ কিলোগ্রাম ওজন। ভারি ডানা কাজে লাগেয়ে তারা ঘণ্টায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারতো। তবে অন্যান্য পাখিদের ডানার গড়নের তুলনায় তিতানিসের ডানার গড়ন ভিন্ন। এদের ছোটো ডানার পেছনের অংশের হাড় সরাসরি মেরুদন্ডের হাড়ের সঙ্গে যুক্ত, যে কারণে অন্যান্য পাখিদের মতো পা দিয়ে বেগ সৃষ্টি করে উড়তে হতো না তিতানিসদের। ডানার বেগ কাজে লাগিয়েই তারা উড়তে পারতো।

তবে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত ফসিলগুলোর মধ্যে কিছু দৃশ্যমান পার্থক্য দেখা যায়। কয়েকটি ফসিলে শুধু ডানার অস্তিত্বের পাশাপাশি হাতের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। যে তিতানিসদের হাত ছিল তাদের ডানা তুলনামূলক কম শক্তিশালী ছিল এবং সেই ডানা দিয়ে লড়াই করতে পারতো না তারা। লড়াইয়ের জন্য হাত ও বিশাল ঠোট ব্যবহার করতে হতো। খাদ্যশৃঙ্খলের হিসেব অনুযায়ী তিতানিস গোত্র ছিল মূলত মাংশাসী। ভূমিতে বসবাসযোগ্য প্রাণী ছিল তাদের খাবার।



মন্তব্য চালু নেই