স্থানীয় নির্বাচনেও জামায়াতকে চায় বিএনপি
দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আলাপ আলোচনা করছে বিএনপি। জামায়াতসহ বিএনপি জোটের শরিক দলগুলোও বসে নেই। এরই মধ্যে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের এলাকায় প্রার্থীর তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন বাদে অন্য সব নির্বাচনেই গেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। কোথাও কোথাও কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ভোটের মাঠে ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির শরিক দলগুলোর নেতারাও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। নির্বাচনে যেতে বিএনপিতে তৃনমূলের চাপ আছে। তবে যাওয়া না যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার পর।
বিএনপির জন্য স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয় হলেও জামায়াতের জন্য তা নয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নিতে পারবে না জামায়াত। তবে জোটবদ্ধভাবে তারা ভোটে লড়তে পারবে। এই অবস্থায় ভোটে গেলে জাতীয় নির্বাচনের মতোই আগামী পৌরসভা নির্বাচনেও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই লড়তে চায় বিএনপি।
তবে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে জোটের দুটি শরিক দলের শীর্ষ দুই নেতা এই সময়কে জানিয়েছেন, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতের একটি অংশের আপত্তি আছে। তবে জামায়াত সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছে। যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট না হয় তাহলে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়বেন।
আগামী ডিসেম্বরে সারাদেশের প্রায় তিনশ পৌরসভা নির্বাচনের উপযোগী হবে। এরপর হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে সব ভোট এক জায়গায় পড়বে। আর দলগতভাবে হলে ভোট আলাদা হয়ে যাবে এবং সে ক্ষেত্রে সরকার দলের প্রার্থীরা সুবিধা পাবে। এ জন্য ভোটে গেলে আমরা জামায়াতসহ জোটের শরিক সব দলকে নিয়ে যেতে চাই’।
বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার কূটকৌশলের অংশ হিসেবেই হঠাৎ করে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিলে সরকার পুরো ফলাফল নিজেদের ঘরে তুলবে। আর অংশ নেয়ার পর নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন মোটামুটি নিরপেক্ষ থাকলে বিএনপি ভালো করবে। তাই রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে অনেকে নির্বাচনে নেয়ার পক্ষে।
এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি বিএনপির পক্ষে সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য করার মতো সুযোগ আছে বলেই মনে করছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বেশিরভাগ নেতা।
তবে দলীয় প্রতীকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় নির্বাচন বর্জন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। আর এই অবস্থায় তৃণমূলে হতাশাও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা। তারা বলছেন, বিনেপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে খোঁজখবর নেয়া শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনে আসলে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে করা নাশকতার মামলাগুলো চাঙা হতে পারে। ফলে রাজনীতিতে টিকে থাকতে তারা সরকারি দলেও যোগ দিতে পারে। যা দলে বড় ধরণের প্রভাব পড়বে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে এখনও সেভাবে আলোচনা হয়নি। তবে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চলছে। বিএনপি নির্বাচনমূখী দল বিষয়টি পরিষ্কার’।
বিএনপি নির্বাচনে গেলে জোটগতভাবেই অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘দেখি আওয়ামী লীগ কী করে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে’।
বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে বিশ দলীয় জোটের শরিক ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া এবং কল্যাণ পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে বলে জানিয়েছেন।
গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘জোটের মধ্যে আলোচনা না হলেও আমরা প্রার্থী হতে আগ্রহীদেরকে প্রস্তুতি নিতে বলেছি’। উত্তরাঞ্চলকেন্দ্রীক ২২টি পৌরসভায় প্রার্থী দেয়ার চিন্তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে জোটের মধ্যে সমন্বয় হলে ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত’।
কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি এটা নিশ্চিত। অর্ধশতাধিক পৌরসভায় প্রার্থী দেয়ার চিন্তুা করছি। তারপরও শরিকদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয় করার সুযোগ থাকবে’।ঢাকাটাইমস
মন্তব্য চালু নেই