সৌরবিমানে চড়ে বিশ্বে একচক্কর

আকাশপথে এক অভিনব যাত্রা শুরু করেছেন আন্দ্রে বোর্শবার্গ এবং বার্ট্রান্ড পিকার্ড। আকাশ পথে তো নিত্য কত লোক যাত্রা করছে। তাদের যাত্রা আর অভিনব হলো কী করে। এভাবে যে- এ আকাশযাত্রা সম্পন্ন হবে সৌরশক্তিচালিত বিমানে এবং বিশ্ব পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে। বিমানের নাম রাখা হয়েছে সোলার ইমপালস-২। আরব আমিরাতের আবুধাবি থেকে এটি বর্তমানে যাত্রা শুরু করেছে, প্রথম গন্তব্য ওমানের মাস্কট। আগামী পাঁচ মাস ধারাবাহিকভাবে ওড়ার পরিকল্পনা তাদের। এ মহাযাত্রায় তারা পেরিয়ে যাবেন আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর। সেইসঙ্গে এ বিশাল জলভাগ জুড়ে থাকা মহাদেশগুলো। সৌরশক্তিচালিত এ আকাশযান নিয়ে যদি সফলভাবে অভিযান সম্পন্ন করা যায়- তাহলে যোগাযোগ এবং জ্বালানী-ভাবনার জগতে বিপ্লব ঘটে যাবে।

৩৫০০০ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দেবে সোলার ইমপালস-২। আগেই বলা হয়ে হয়েছে- দীর্ঘ এ যাত্রায় পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে অস্থায়ীভাবে থামবে এ বিমান। বলা হয়নি- কী শ্লোগান নিয়ে এটি যাত্রা শুরু করেছে। সৌরশক্তিচালিত এ বিমানের যাত্রা করার উদ্দেশ্য- মানুষের মধ্যে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের উৎসাহ তৈরি করা। বোর্শবার্গ বিমান নিয়ে আকাশে ওড়ার আগে মুখোমুখি হয়েছিলেন গণমাধ্যমের। বলেছেন, তারা তাদের এ যাত্রার সাফল্যের ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী। আগামী পাঁচ দিন এবং পাঁচ রাত অবিরত যাত্রা চালিয়ে যাবেন।

পরবর্তী দুই মাসের পরিকল্পনা হচ্ছে চীনে অবতরণ করা এবং সেখানে তুলনামূলক দীর্ঘ সময় থেকে আরও দীর্ঘ যাত্রার প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণে সময় দেয়া।

structure-of-solar-plane

সৌরশক্তিচালিত বিমানে চড়ে আাকাশপথে বিশ্ব পরিক্রমনের প্রকল্পটি কাগজে কলমে শুরু হয়েছিল মূলত ২০০৯ সালের আগে থেকে। ২০০৯-এ আজকের সোলার ইমপালস-২ এর পূর্বপুরুষ সোলার ইমপালস-১ এর নকশা-বাস্তবায়ন চূড়ান্ত করা হয়। ঐ বিমানে কিছু ত্রুটিপূর্ণ দিক ছিল, যেগুলো নতুন সংস্করণে শুধরানো হয়েছে। সোলার ইমপালস-২ আকারে হয়ে গেছে পূর্বপুরুষের চেয়েও বড়। তবে ক্ষমতাও বেড়েছে। নতুন মডেলের দুই ডানার বিস্তার ৭২ মিটার। এ দৈর্ঘ্য সাধারণ জাম্বো জেটের চেয়ে বেশি। তবে ভর দাঁড়িয়েছে ২.৩ টন; প্রায় ২০৮৬ কিলোগ্রাম। অনেকেই বলছেন এতো অল্প ভর এবারও বাতাসের বিপরীতে ওড়ার পথে বিপত্তির কারণ হতে পারে। ব্যাপারটিকে উড়িয়ে দেননি বৈমানিকরা। কিন্তু এটাকেই আপত-সর্বোত্তম গঠন ধরে যাত্রা আরম্ভ করেছেন।

route-of-solar-plane

তাদের প্রধান শক্তিটি হচ্ছে, এ বিমান উড়তে পারবে রাতেও, যখন সৌরশক্তির সঞ্চয় সচল থাকবে না। কেননা ডানার উপরিভাগে লাগানো ১৭,০০০ সৌরকোষ আর উচ্চক্ষমতার লিথিয়ান আয়ন ব্যাটারি রাতে উড্ডয়নের শক্তিপ্রদান নিশ্চিত করেছে। রাতে চলাচলের ব্যাপারটি শুধুমাত্র সময় বাঁচাতেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। যখন বিমানটি দুটো মহাসাগরের সর্বোচ্চ দূরত্ব অতিক্রম করবে- নীচে পাবে না কোনো শক্তি সংগ্রহের মতো স্থলভাগ- তখন রাত হয়ে এলেও যেন চলা থেমে না যায়, এ বিশেষ ব্যাপারটিতেও এগিয়ে থাকবেন তারা। তবে, হিসেবে দেখা গেছে তারা চেয়ারে বসে বসে বিড়ালঘুম দিতে পারবেন মাত্র কুড়ি মিনিটের জন্যে। এটা বিমানচালনাকালে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করবে।

আর, আরাম আয়েশের দিক থেকে আরও পিছিয়ে থাকবেন তারা ককপিটের আয়তনের কারণে। এর আয়তন মাত্র ৩.৬ ঘনমিটার। কোনো টেলিফোনবক্সের আয়তন সাধারণত যতটুকু হয় থাকে। সাময়িক অস্বস্তিগুলো কাটাতে সাহায্য করবে ফ্লাইট স্টিমুলেটর। ক্ষণকালের জন্যে বিমানের স্বয়ংক্রীয় নিয়ন্ত্রণভার নিতে পারবে ঐ স্টিমুলেটর। এ সব বিষয়ে কথা হয়েছে আগেই। রসিক দুই বৈমানিক কিভাবে অবসাদ কাটাবেন সে পরিকল্পনাও জানিয়েছিলেন গণমাধ্যমকে। বোর্শবার্গ জানিয়েছেন তিনি যোগাসন করবেন, আর পিকার্ড করবেন আত্ম-সম্মোহন। পিকার্ড বলেন, এসব ভাবনা তাদের সাময়িক আলোচনার খোরাকমাত্র। মূল যে উদ্দেশ্য তাদের সামনের দিক নিয়ে যাবে তা হলো, ১৬ বছর ধরে পুষে রাখা জ্বালানীবিহীন বিমানে বিশ্বপরিক্রমণের স্বপ্ন।

ছবি: বিবিসি।



মন্তব্য চালু নেই