সোমবার মন্ত্রিসভায় উঠছে না নতুন পে-স্কেল
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেলের (বেতন কাঠামো) প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য সোমবার মন্ত্রিসভায় উঠার কথা থাকলেও তা উঠছে না। নানা জটিলতা দেখা দেওয়ায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আরও এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সচিব কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে সুপারিশগুলো প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফেরত এসে এটি অর্থমন্ত্রীর কাছে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নতুন পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল তুলে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকসহ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এসব জটিলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে পে-স্কেল সোমবার মন্ত্রিসভায় উঠার সম্ভাবনা কম।
এর আগে গত ২৭ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সোমবার পে-স্কেল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে পে-স্কেলের সুপারিশগুলো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে নির্ধারিত দিনে পে-স্কেলের সুপারিশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠার সম্ভাবনা কম। এটি আরো দুই-এক সপ্তাহ লাগতে পারে।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পরও পে-স্কেল চূড়ান্ত হতে অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সেগুলো শেষ হতে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।
সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পান এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এদের সবার জন্য বেতন নির্ধারণের ছক পূরণ করতে হবে। প্রতিটি ছকের জন্য ৩৩টি বিষয় রয়েছে। এছাড়াও সরকারি-বেসামরিক, পুলিশ, বিজিবি, স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস, নার্সিং পেশায় নিয়োজিত ডিপ্লোমাধারীদের জন্য বেতন স্কেল সংক্রান্ত ৭টি বই তৈরি করতে হবে। তবে সেনাবাহিনীর বই তারা নিজেরাই তৈরি করবে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে কমপক্ষে দুই মাস লেগে যাবে।
পে-স্কেল চূড়ান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্রটি জানায়, সচিব কমিটির সুপারিশের পর পে-স্কেল পর্যালোচনা শেষে তা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেটি এখন অর্থমন্ত্রীর কাছে আছে। মন্ত্রিসভা থেকে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। আইন মন্ত্রণালয়ে থেকে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে কমপক্ষে দুই মাস লেগে যাবে।
এর আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, পে-স্কেল চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে। এটা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ লেগে যেতে পারে। যখনই চূড়ান্ত হোক না কেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নতুন পে-স্কেল জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হবে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন পে-স্কেল নিয়ে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সংগঠনটির নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মো. হানিফ ভূঁইয়া বলেন, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়। অর্থমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছে আগামী সোমবার নতুন তারিখ জানানো হবে।
তিনি বলেন, পে-কমিশন ১৬টি গ্রেডের প্রস্তাব করলেও পর্যালোচনা কমিটি কর্তৃক ২০টি স্কেলের মধ্যে কর্মচারীদের জন্য ১০টি স্কেলের ব্যবধান ৪ হাজার ২৫০ টাকা, অপরদিকে কর্মকর্তাদের জন্য ১০ স্কেলের মধ্যে আর্থিক ব্যবধান ৫৯ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পর্যালোচনা কমিটি যে সুপারিশ করেছে, এর আগে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা এতোটা বৈষম্যের শিকার হননি। আমরা মনে করি এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়াও কমিটির সুপারিশে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রথা বাতিল হলে আমরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হব। এ বিষয়গুলো বিবেচনা না করলে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে উন্নীত হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের সম্মানিত বোধ করতেন। এ ব্যবস্থা উঠিয়ে দেওয়া হলে তাদের সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নতুন স্কেলের শুধু বেতন বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
অষ্টম পে-স্কেলে সর্বোচ্চ বেতন হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। নতুন কাঠামোতে বেতনের গ্রেড থাকছে ২০টি। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের বেতন ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) এবং জ্যেষ্ঠ সচিবের বেতন ৮৪ হাজার টাকা (নির্ধারিত)।
মন্তব্য চালু নেই