সেরা মানুষঃ আমরা কি এই মানুষটির মহানুভবতা জানি? ( ভিডিও )
ছাত্র ছাত্রীদের কাছে যদি শোনা হয় বড় হয়ে কি হবে? বেশীরভাগই উত্তর দিবে ডাক্তার হব। ডাক্তারি একটা সেবামূলক পেশা যেখানে মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে সেবা দেয়া যায়। ডাক্তারদের এই সেবা পেতে অনেক টাকাও খরচ করতে হয় মানুষকে। আবার অনেক ডাক্তার আছেন যারা সত্যিই টাকার চেয়া সেবাকে বেশী গুরুত্ব দেন। ভাবতে পারেন একজন ব্যক্তি তার উন্নত বিশ্বের বিলাসী জীবন ছেড়ে এক গরীব দেশের অভাগা কিছু মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে তার জীবনকে উৎসর্গ করছেন? হ্যাঁ অবাক হলেও এমন কিছু মানুষ আছেন এই পৃথিবীতে। নিউজিল্যান্ডের সার্জারীর চিকিৎসক এড্রিক বেকার সেই ১৯৭৯ সাল থেকে টাঙ্গাইলের নিভৃত পল্লীতে গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এটা দিয়ে যেতে চান।
সাদা চামড়ার এক MBBS ডাক্তার একটি মাটির ঘরে বাস করছেন ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বিয়েও করেন নি।
ডাক্তার সাহেব ছোট বেলা থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে চাইতেন। শুরু করেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিউজিল্যান্ড সার্জিকাল দলের সাথে স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে। একবার লক্ষ্য করলেন যুদ্ধে বুলেট বা বোমার আঘাতে আহত অনেক সৈনিক চিকিতসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু কয়মাস পর সেই সৈনিক দেখা যাচ্ছে মারা গেলো ডায়রিয়া তে!
৮০’র দশকে তিনি বাংলাদেশে আসলেন। অবাক হয়ে দেখলেন এখানের লোকজন আরো গরীব। দিনের বেশিরভাগ সময় ইলেক্ট্রিসিটি থাকে না। বৃস্টি পড়লে কাদা মাটির ভেতর থাকতে হয়। সব লোকই গরীব। ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেই। শুরু করলেন “কালিয়াকুরি হেলথ কেয়ার সেন্টার” প্রজেক্টের কাজ।
এখানে তিনিই একমাত্র ডাক্তার। ধীরে ধীরে ট্রেইন করলেন গ্রামের প্রাইমারী বা সেকেন্ডারি স্কুল পর্যন্ত পড়া ৮৯ জনকে। এদের বলা হলো “বেয়ার ফুট মেডিকস”। খালি পায়ে হেটে দূর দুরান্তে এরা স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে। ৩ কি.মি. এর ভেতরে যেসব রোগী আসছেন তাদের জন্যে আউটডোর চিকিৎসা সেবার চার্জ ৫ টাকা। এর বাইর থেকে যারা আসছেন তাদের জন্যে ১০ টাকা। টাকা না থাকলে সমস্যা নেই। চিকিৎসা ছাড়া কেউ ফেরত যাবে না।
রোগী দেখার পর ওষুধপত্র দেয়া হয়। ওষুধের টাকা না থাকলেও সমস্যা নেই। সেটাও ফ্রি। প্রতিদিন ১০০ এর মত রোগী আসছে এখানে। জ্বর, টিবি, ডায়বেটিস, ডায়রিয়া, বার্ন, কাটাচেড়া, এন্টি নেটাল কেয়ার, ফ্যামিলি প্লানিং, শিশু স্বাস্থ্য সব কিছুরই চিকিৎসা হয়।
হস্পিটালাইজড থাকতে হবে রোগীকে? সেটাও সমস্যা নেই। বহুকষ্টে ৩৫ বেডের ইনডোর ফ্যাসিলিটি তৈরী করেছেন তিনি। ইনডোরে আছে টিবি, বার্ন, ডায়রিয়া, ডায়বেটিস এবং মা ও শিশু ইউনিট। ইনডোর এডমিশন ফি ১০০ টাকা। ঐ টাকা দিয়ে যতদিন প্রয়োজন সেখানে ভর্তি থাকবেন। খাবার, চিকিৎসা, ওষুধ সব ওই ১০০ টাকা মধ্যেই!এমনকি দূর থেকে রোগী পরিবহনের জন্যে আছে গরুর গাড়ি বা ভ্যান।
আরাম দায়ক বেড সেখানে নেই। আছে মাটির ঘর এবং চাটাইয়ের বিছানা। কিন্তু মানুষ খুব খুশি। কারণ তাদের চিকিৎসা করছেন মমতাময় সাদা চামড়ার এই ভদ্রলোক। সবাই তাকে ডাকেন “ডাক্তার ভাই”। তার মার্সিডিজ বা প্রিমিও নেই। এক খানা সাইকেলে চড়ে দূর দূরান্তে রোগী দেখতে যান। তাও ফ্রি।
কথাবার্তায় ভীষন অমায়িক ডাক্তার ভাইকে জিজ্ঞাসা করা হলো কেনো তিনি বাংলাদেশকে বেছে নিলেন তার কাজের জন্যে। তিনি বললেন- বাংলাদেশের মানুষ খুব সরল, গরীব এবং ভালো। তাদের স্বাস্থ্য সেবার জন্যে “সামান্য” সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই ৩০ বছর এখানে থেকে যাওয়া। বছরে ৩৩,০০০ রোগীর জন্যে আউটডোর সেবা, ১০০০ রোগীর জন্যে ইনডোর সেবা এবং প্রায় ২১,০০০ মানুষকে হেলথ এডুকেশন দিচ্ছেন তিনি তার প্রজেক্টের মাধ্যমে। খুব “সামান্যই” বটে!!
বছরে এই হেলথ সেন্টারের বাজেট প্রায় ১ কোটি টাকা। নিউজিল্যান্ডের মাত্র দুই জন ম্যানেজারিয়াল পোস্টের লোকের বার্ষিক ইনকামের সমান এই বাজেট। ২ জন নিউজিল্যান্ডের লোকের ইনকামে প্রায় ৫০,০০০ বাংলাদেশির স্বাস্থ্যসেবা!
কোথা থেকে আসে এই টাকা? ৮৫ ভাগ সম্পুর্ন ব্যক্তিগত ডোনেশন, বাকি ১৫ ভাগ কন্ট্রিবিউট করছে রোগীরা। অনেক রাতে অর্থসংস্থানের চিন্তায় ঘুম ভেঙ্গে যায় ডাক্তার ভাই এর। বছরে একবার যান নিউজিল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ডের শহর বন্দরে ঘুরে বেড়ান “ডোনেশান ফর কালিয়াকুরি হেলথ সেন্টার প্রজেক্ট” নিয়ে। ৭০ উর্ধ্ব ডাক্তার এখন প্রায়ই অসুস্থ থাকেন।
অপেক্ষা করছেন একজন “সাকসেসর” এর যে তার এই প্রজেক্ট এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভদ্রলোকের নাম ডাঃ এড্রিক বেকার। জন্ম নিউজিল্যান্ডে। হাজার মাইল দূরে এসে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত কালিয়াকুরি গ্রামে পড়ে আছেন ৩০ বছর ধরে।
এই নিভৃতচারী মানুষটিকে নিয়ে ইত্যাদি একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। আসুন দেখি সেই প্রতিবেদন।
আওয়ার নিউজের পক্ষ থেকে এড্রিক বেকারের জন্য শ্রদ্ধা
মন্তব্য চালু নেই