সেই ১১ মাস কারাবাসের বিভীষিকাময় বর্ণনা দিলেন শেখ হাসিনা (ভিডিও)
যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মতো সংবিধান ধ্বংসকারীদেরও বিচার হবে। যারা দেশের বিরুদ্ধে, দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের মুক্তি দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় একথা বলেন শেখ হাসিনা।
দুটি পত্রিকা সবসময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছে: এসময় তিনি দেশের প্রধান দুটি সংবাদপত্রের ভূমিকার কথা টেনে এনে বলেন, এই দুটি পত্রিকা সবসময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছে। ষড়যন্ত্র করে গেছে। কিন্তু বিএনপি যখনই কোনো অন্যায় করেছে তখনই সেসব এড়িয়ে গেছে। ২০০১ সালে তাদের অন্যায় আচরণের সংবাদ প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য ছিলো, সরকারকে আরো কিছু সময় দিতে হবে। তিনমাস সরকারের বিরুদ্ধে নাকি তারা কিছু লিখবে না। সত্য কখনো চাপা দেওয়া যায় না। ডিজিএফআই যা বললেন তাই তারা হুবহু ছেপে দিলেন, তাহলে কি আমরা ধরে নেব তারা ডিজিএফআই যা বলেন সেটাই করেন। তাদের সঙ্গে মাইনাস টু মানে আমাকে এবং খালেদা জিয়াকে আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না তার সম্পর্ক রয়েছে। তারা সবসময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মতো সংবিধান ধ্বংসকারীদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
বিদেশী একটি মাধ্যমের সাংবাদিকের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিবিসি একবার এক মন্ত্রী বা এমপিকে নিয়ে কিছু মিথ্যে তথ্য লিখেছিলো। পরে সেটা প্রমাণিত হওয়ায় তারা শুধু ক্ষমাই চাননি বরং যারা যারা এই সংবাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সবাই একাধারে পদত্যাগ করেন। আমাদের এই সম্পাদক তাদের পত্রিকার উপরে লিখেন ‘নির্ভীক সাংবাদিকতা’। এটাই কি নির্ভীকতা নাকি তিনি ডিজিএফআইয়ের হাতে বিক্রি হয়ে গেছিলেন? আমরা তো জানি এই পত্রিকার ভাষা অনেক ভালো। তাহলে কি ডিজিএফআইয়ের ইংরেজি আরো ভালো ছিলো, যে তারা না পড়েই তা ছাপিয়ে দিয়েছে?
পিতৃতুল্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক: পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে সেই সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তারা প্রকল্প নিয়েছিলো আমাদের দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করেই ছাড়বে। সেজন্য টানা আমার বিরুদ্ধে লিখে গেছে। কখনো কখনো একটি ভালো লেখা লিখলেও শেষে আবার খোঁচা দিয়ে রেখেছে। তাদের আমি বলতে চাই, আপনি তো আপনিই, আপনাদের পিতৃতুল্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকওতো পদ্মা সেতুর ব্যাপারে আমাদের দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করতে পারে নি। এখন তো মনে হয় আপনারা সবাই বাছুরের গাই হয়ে গেছেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বখ্যাত এক ব্যক্তির শখ হলো তিনি রাজনীতিতে আসবেন। ৭০ জনের তালিকাও করলেন। কিন্তু কেউ সাড়া দিলোনা। তার অবশ্য মোবাইল ব্যবসা বেশ ভালোই চলছিলো। সেটাও আমিই করতে দিয়েছিলাম। ২০১৪ সালের নির্বাচন নস্যাৎ করতে তাদের কি ভূমিকা ছিলো সেটাও নিশ্চয়ই আপনারা বিবেচনা করবেন।
নিজের দলের অনেকের কথা বলে শেখ হাসিনা বলেন, অামাদের দলের অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে, অনেক কথা বলতেই চায়নি। কিসের এত দ্বিধা? আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এভাবে বাংলাদেশ এগোবেই।
দুঃসহ কারাবাসের বর্ণনা: বক্তৃতায় তত্ত্বাবাবধায়ক সরকারের সময়ের দুঃসহ কারাবাসের বর্ণনাও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কয়েকটি মামলা হতেই এত ভয়। আমিতো টানা এগারো মাস নিঃসঙ্গ কারাবাস করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট ছিলো না। আমাকে গ্রেপ্তার করার সময়ে আমার অসুস্থ স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তারপর জোর করে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্ধকার জেলখানায় আমাকে রাখা হয়েছে। যেখানে না রয়েছে কোনো আলো-বাতাস। ইঁদুরে কাটা বিছানার চাদর। খাবার আসতো জেলখানা থেকে। যতদিন না খালেদা জিয়া জেলখানায় আসলেন ততদিন ভালো খাবার আসেনি। ১১টা মাস আমাকে নিঃসঙ্গ কারাবাস করতে হয়েছে। ঈদে আমাকে কারো সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আমার ফুপু এসেছেন দেখা করতে কিন্তু তাকে বলা হয়েছে তিনি কোনো প্রেসের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। আমার আবার প্রেসারের সমস্যা। আমাকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে অসুস্থ অবস্থাতে কোর্টে তোলা হয়েছে। চোখে ইনফেকশন হয়েছে তবুও ডাক্তার পাইনি।
ফখরুদ্দিন-মঈন ইউ প্রসঙ্গ: বক্তৃতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব ছিলো নির্বাচন দেওয়ার। তা না করে তারা গেড়ে বসলেন। ফখরুদ্দিন আর মঈনুদ্দিনও শুরু করলেন তাদের কাজ। তাদের নিয়ে এসেছিলেন ওই বিএনপিই। ফখরুদ্দিন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরি করতো তাকে সেখান থেকে ধরে এনে বাংলার গভর্নর বানালেন। আর মঈনুদ্দিন নয়জনকে ডিঙিয়ে হয়ে গেলেন আর্মির প্রধান।চ্যানেল আই
মন্তব্য চালু নেই