সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর আজ
৮ বছরেও বদলায়নি উপকূলবাসীর ভাগ্য
আজ ভয়াল ১৫ই নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই রাতে ২৪০/২৫০ কি.মি বেগে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর। মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে উপকূলীয় জনপদ ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়। সেই প্রলয়কারী ঝড়ের পর আট বছর পার হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি উপকূলবাসীর।
দীর্ঘ দিন থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি টেকসই বাঁধ নির্মাণ উপেক্ষিত হয়েছে বার বার। তারপরও আশায় বুক বাঁধে উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
সঙ্গে দিনের সেই ভয়াবহতার স চক্ষে দেখা রূপা আজও শিউরে উঠে, ঝলকাঠি জেলার কাউখালী ইউনিয়নের মুক্তা নবজাতক সন্তাকে বুকে নিয়ে এসেছিলেন স্বামীর বাসায় নতুন স্বপ্নের প্রত্যাশায় কিন্তু প্রলয়কারী সিডর কেড়ে নেয় তার সমস্ত সুখ আহলাদ। বুকের ধনের একটি বারের মা ডাকও জোটেনি তার ভাগ্যে। ঘরের আড়ার নিচে পৃষ্ট হয় সে। নিজের পরম মমতায় সন্তানকে আগলে রাখলেও তার মাথায় পেরেক ঢুকে দীর্ঘ সময় রক্তক্ষরণের পর তার মৃত্যু হয়। এসময় তার ৭দিনের সন্তানটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে রূপ।
সেই ভয়াবহ দিনের পর কেটে গেছে দীর্ঘ আটটি বছর তার পরও জায়নি উপকূলে বাসকারী মানুষের ভোগান্তি। সিডরের পর বাগেরহাটের শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের কিছু কিছু অংশের বাঁধে বাড়তি মাটি দিয়ে সিসি ব্লক স্থাপন করা হলেও অধিকাংশ জায়গায় রয়েছে মাটির সরু রাস্তা দিয়ে ঘেরা। কোনো কোনো অংশের বাঁধ আবার ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চরম আতঙ্ক হয়ে বসবাস করছে নদী তীরবর্তি শরণখোলা উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এছাড়া পিরোজপুর, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, জিয়ানগরের সাউথখালি সহ অন্যান্য উপজেলার মানুষ আরসেনিক ও লোনা পানির কারণে ভুগছেন নানা রোগ বিরাগে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন মহল একের পর এক আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে। শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদী তীরবর্তী বগী গ্রামের আ. রশীদ বলেন, ‘সিডরের পর থেকেই সবাই আশা দিয়া আইতে আছে, টেকসই বাঁধ কইর্যা দেবে। কিন্তু টেকসই বাঁধের কোনো দেহা-সাক্ষাৎ নাই। মোরা শ্যাস হইয়া যাওয়ার পর কী টেকসই বাঁধ দেবে সরকার?’
উপজেলার তাফালবাড়ির নদীর পাড়ের বাসিন্দা জহরা বেগমের বলেন, ‘ভয়তে রাইতে ঘুমাইতে পারি না, কোন সময় যেন নদীর পানি আইয়া মোগো চুবাইয়া মারে। উচা-শক্ত বান্দ না হইলে মোরা বাচতে পারমু না’।
শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযাদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, উপকূলীয় এ এলাকার মানুষের বাঁচা মরা অনেকটাই নির্ভর করে বলেশ্বর তীরবর্তী বাঁধের উপর। এই বাঁধ ভেঙ্গেই ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে সাউথখালী ইউনিয়নের প্রায় ৭শ’ মানুষ মারা যায়। ধ্বংস হয়ে যায় ঘর-বাড়িসহ আরো অনেক কিছু।
সেই থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে টেকসই বাঁধ তৈরি করে দেয়ার। এখন আবার শোনা যায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে শিগগিরই টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু কবে নাগাদ টেকসই বাঁধ হবে তা জানা নেই কারোই। রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, আমাদের দীর্ঘ ৮ বছরের দাবি, আমরা ত্রাণ চাই না তবে টেকসই বাঁধ চাই। ওই দাবি এখনো রয়েছে তিমিরে। এছাড়া শরণখোলাবাসীকে রক্ষার জন্য আবাসন ব্যবস্থা, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানসহ টেকশই বাঁধ নির্মাণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২.৭২ কি.মি টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকারের পর্যাপ্ত বাজেট আছে প্রয়োজন হলে শরণখোলায় সাইক্লোন শেল্টারের ব্যবস্থা করা হবে। আর বাঁধ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের বাংলাদেশের উপকূলে প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে প্রায় চার হাজার মানুষ মারা যায়।
মন্তব্য চালু নেই