যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াও চলবে
সেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সার্ক সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন লঙ্ঘন করে বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের চাকরি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা কী উদ্দেশ্যে সেখানে গেছেন সে ব্যাপারে সবার আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সচিবালয়ের সাবেক ও বর্তমান ২০/২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। যদিও বিএনপি তা অস্বীকার করেছে।
২০০৬ সালে উত্তরায় মাহমুদুর রহমানের অফিসে আমলাদের বৈঠকের কথাও এ সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীর এই যে গভীর রাতে চুপকে চুপকে দেখা করা.. এটা কেন। একটা সিনেমা আছে না.. চুপকে চুপকে!’
টিআইবির আয়ের উৎস খোঁজবেন প্রধানমন্ত্রী:
দেশে দুর্নীতি বেড়েছে, ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)র এমন তথ্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলছে না টিআইবি। তাদের উদ্দেশ্য কী? সেটাও জানার বিষয়। সরকারের কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়েছে তা তারা স্পষ্ট করে বলুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা প্রচার হয়েছে বিদেশে। আমরা সে টাকা উদ্ধার করেছি। অরফানেজের টাকা মেরে দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী। মামলা হয়েছে, তিনি ভয়ে কোর্টে যেতে চান না। মামলার ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান। কই সে ব্যাপারে তো টিঅইবি কথা বলছে না? তার পুত্র টাকা মেরে লন্ডনে আলিশান জীবনযাপন করছেন। তাদের বিষয়ে তো কোনো কথা হয় না। টিআইবি তাদের দুর্নীতিটা একটু বের করুক না।’
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ ১৬ কোটি মানুষের দেশ, এখানে কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। দুর্নীতি যা হচ্ছে সব খুচরা। কোন দেশে দুর্নীতি নাই? আমরা সরকারে আছি, আমরা দুর্নীতি করছি কি না সেটা বলুন। আমরা যদি দুর্নীতি করতাম তাহলে এ বিশ্ব মন্দার সময় দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ ভাগ। মাথাপিচু আয় বেড়েছে।’
বিএনপির আমলের একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই ব্যক্তি টাকার পাহাড় গড়েছে। তার বিষয়ে তো তারা (টিআইবি) কোনো কথা বলেনি। তখন টাকা বিনিময়ে ইজ্জত কেনা যেতো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আজকে কথা বলছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা খোঁজ খবর নেবো। তাদের আয়ের উৎস কী তারও খোঁজ-খবর নেয়া হবে। তাদের টাকা কোথা থেকে আসে কোথায় ব্যয় হয় তার জবাবদিহিতা করতে হবে।’
পাকিস্তানের কাছে চাওয়ার কিছু নেই:
পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিনষ্ট করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্য়ালয় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। তারা একটি পরাজিত জাতি। তাদের কাছে চাওয়ার কিছু নেই। তারাই এখন জানতে চাচ্ছে আমরা এতো উন্নতি করছি কিভাবে? সার্কের চার্টারে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। সার্ক সনদ অনুযায়ী পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা আচরণ করেছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। কেউ পাশে থাকলো কী থাকলো না সেটা বিষয় নয়, যুক্তরাষ্ট্র পাশে না থাকলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অত্যন্ত সফল হয়েছে। নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনার বিষয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের আশিয়ানের সদস্য হওয়ার বিষয়ে আশ্বাস পাওয়া গেছে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও এ সফর কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। মালয়েশিয়া সফরের উদ্দেশ্য ছিল, মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা। বাণিজ্য বৈষম্য দূর করতে সফল দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াও চলবে:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। কে পাশে থাকলো কে থাকলো না তাতে কিছু আসে যায় না।’
শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সার্ক সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরই বিএনপি বলে, আর একটা ধাক্কা দিলে সরকার পড়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এটা মনে রাখতে হবে। কে পাশে থাকলো বা থাকলো না তাতে কিছু আসে যায় না।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করার পরেই আমরা স্বাধীন হয়েছি। এরপর পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অপবাদ দিয়েছে। শুনেছি সেসময় মার্কিন পররাষ্ট মন্ত্রীর নির্দেশেই পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করা হয়। এরপর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আমরা তাদের ছাড়াই করেছি।’
উল্লেখ্য, এর আগে নিশা দেশাইকে দুই আনার মন্ত্রী বলে অভিহিত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হবে বলে গণমাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা যে বলেছে তার ব্যক্তিগত মতামত। এ ব্যাপারে তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।’
মন্তব্য চালু নেই