সূর্যের আলোয় চলছে বুলবুলের বাইক

পাকুন্দিয়া পৌর সদরের হাপানিয়া গ্রামের এনামুল হক বুলবুল সোলার প্যানেল লাগিয়ে চালাচ্ছেন মোটরসাইকেল। নিজে তো চালাচ্ছেনই, কয়েকটি বিক্রিও করেছেন। সূর্যের আলোয় চলা স্বল্পমূল্যের সেই মোটরসাইকেল নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বুলবুলের কাজে অর্ডারও দিচ্ছেন।

এনামুল হক বুলবুল (৩৫) পাকুন্দিয়া পৌর সদরের হাপানিয়া গ্রামে এমদাদুল হক জসিমের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। অপর দুই ভাইয়ের একজন এমবিএ করে চাকরি করছেন। অপরজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। তাদের বাবা এমদাদুল হক বেসরকারি সংস্থায় চাকরি শেষে এখন অবসরে। মা সুফিয়া আক্তার পরিবার পরিকল্পনার স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা।

শিক্ষিত পরিবারের সন্তান হয়েও পড়াশোনায় তেমন মনোযোগ না থাকায় এইচএসসি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় বুলবুলকে। পড়াশোনায় তেমন এগুতো না পারলেও তার ছিল অন্য প্রতিভা। ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু তৈরি করা তার নেশার মতো ছিল। এর আগে সোলার প্যানেল দিয়ে তিনি চারচাকার যান আর অটোরিকশা তৈরি করেন। যা অনেক প্রশংসিত হয়েছে। সর্বশেষ তিনি মোটরসাইকেলে সংযোগ করেছেন সোলার প্যানেল। সূর্যের আলোয় দিব্যি তিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন সড়কে। কয়েকটি বাজারজাতও করছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সে কথোপকথনই তুলে ধরা হলো পাঠকের জন্য:

প্রশ্ন: সোলার প্যানেল দিয়ে মোটরবাইক চালানোর ধারণা কী করে এলো?
বুলবুল : ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু করার চেষ্টা করতাম। সেই ইচ্ছে থেকেই মোটরসাইকেলে সোলার প্যানেল সংযুক্ত করার চেষ্টা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছি।

প্রশ্ন: মোটরসাইকেলে সোলার প্যানেল সংযুক্ত করতে কত খরচ পড়ে?
বুলবুল : প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো। এর মধ্যে প্রয়োজন ১২ ভোল্টের দুটি ব্যাটারি আর ৬০ ওয়াটের সোলার প্যানেল। অবশিষ্ট বাইকের যন্ত্রাংশ।

প্রশ্ন : সোলার প্যানেল লাগানোর পরে মোটরবাইকটির গতি ও সুবিধা কেমন?
বুলবুল : গতি ঘণ্টায় ৩৫ কিলোমিটার। বেশ সুবিধাও রয়েছে। যেমন, একটি মোটরবাইক থেকে দুটি টিউব লাইট জ্বালানো আর একটি মোবাইল চার্জ করা যাবে। এজন্য অতিরিক্ত খরচ লাগবে না। আবার সূর্যের আলো ছাড়াও বৈদ্যুতিক চার্জের ব্যবস্থা রাখা আছে। এছাড়াও কম বিদ্যুৎ খরচে বাইকটি পূর্ণ চার্জ করা যাবে। আরেকটি বড় সুবিধা, এ মোটরসাইকেলটি সব ধরনের দুষণমুক্ত। তাই পরিবেশের কোনো ক্ষতি নেই।

প্রশ্ন: পূর্ণ চার্জ করার পরে কত কিলোমিটার চালানো যাবে?
বুলবুল : বাইকটি পূর্ণ চার্জ করা হলে ৫০-৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলাচল করা সম্ভব।

প্রশ্ন : চীনের প্রযুক্তিতে তৈরি বৈদ্যুতিক চার্জ সম্বলিত মোটরবাইক বাজারে এসেছে। তাহলে আপনার তৈরি বাইকটি কেন কিনবে মানুষ?
বুলবুল : ভালো কথা। চীনের তৈরি বাইকটি কিনতে ৬৫-৭০ হাজার টাকা লাগে। আর আমার তৈরি করা বাইক কিনতে খরচ হবে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। জিনিস কিন্তু একই। তবে আমারটা দামে সস্তা।

প্রশ্ন : চীনের বাইকটির যে গতি, আপনার উদ্ভাবিত বাইকেরও গতি কি একই হবে?
বুলবুল : চীনেরটার তুলনায় সোলার প্যানেলের বাইকের গতি একটু কমই। তবে আরও শক্তিশালী মোটর ব্যবহার করলে গতি দ্বিগুণ হবে।

প্রশ্ন : বাইকটি বাজারজাতকরণে সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
বুলবুল : প্রথম অবস্থায় খারাপ বলা যাবে না। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অর্ডারও আসছে।

প্রশ্ন : আপনার এ বাইক তৈরিতে কারও পার্টনারশিপ আছে কি?
বুলবুল : পার্টনার বলতে আলমগীর হোসেন নামে আমার এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী বন্ধু রয়েছে। তার অর্থনৈতিক সহযোগিতায় বাইকটি তৈরি হচ্ছে।

প্রশ্ন : একেকটি বাইক তৈরি করতে কত সময় লাগে? কোথায় তৈরি হচ্ছে এসব বাইক?
বুলবুল : দুই একদিনের মধ্যেই একটি বাইক তৈরি করা সম্ভব। আমাদের পারিবারিক ছোট্ট একটা কারাখানা আছে।সেখানেই নিজ হাতে এসব বাইক তৈরির কাজ করছি।

প্রশ্ন : বাইক বাজারজাতকরণে কোনো পদক্ষেপ আছে কি?
বুলবুল : হ্যাঁ। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অর্ডার পাচ্ছি। পাশাপাশি বাজারজাতকরণে চেষ্টা চালাচ্ছি।

প্রশ্ন : আপনার সফলতা কামনা করছি। ধন্যবাদ।
বুলবুল : আপনাকেও ধন্যবাদ।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই