`সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ফরমুলা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ফরমুলা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান।

‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজন আছে কিনা’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদে তিনি এমন কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ নামক একটি সংগঠন এই ছায়া সংসদের আয়োজন করে।

ড. আকবর আলী খান বলেন, সাংবিধানিক কাঠামোতে যার যা দায়িত্ব রয়েছে, তা পালন করলে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজন হয় না এটা সঠিক। কিন্তু বাস্তবে কেউ সাংবিধানিক দায়ত্ব পালন করে না।

ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনকালীন সময়ের দায়িত্ব পালন নিয়ে নানা মতামত ব্যক্ত করছে।

ক্ষমতাসীন দল থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।

এই দুই দলের মতানৈক্যের বিষয়ে অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে ডা. আকবর বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেখা যায় সরকারের যেটা দায়িত্ব নয়, সে সেটা পালন করতে যায়। রাজনৈতিক দলের যেটা দায়িত্ব নয়, সেটা সে পালন করতে যায় বিধায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।

এ সময় নির্বাচনকালীন সরকারের সংজ্ঞা উল্লেখ করেন ড. আকবর। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন ক্ষমতাসীন দল যদি দায়িত্ব পালন করে সেটাকেও নির্বাচনকালীন সরকার বলা হয়।

নির্বাচনকালীন সরকার থাকবেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েক ধরনের নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে।

এ বিষয়ে ড. আকবর আলী খান বলেন, যে সরকার ক্ষমতায় ছিল সেই সরকারও থাকতে পারে, তবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তার ক্ষমতা সীমিত থাকবে। সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। রুলস অব বিজনেস এবং কিছু এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে সেটা করা সম্ভব।

ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হলে ওই সরকারের ক্ষমতায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে এবং নির্বাচন ফরমুলার পরিবর্তন আনতে হবে।

এছাড়া সর্বদলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচন পরিচালিত হতে পারে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়ে ড. আকবর বলেন, বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের উপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। অথচ আমলারাই নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সহায়ক। এ কারণেই নির্বাচনকালীন দলীয় সরকারের পরিবর্তে বিশেষ সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে সরকারের হাতে যত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে পৃথিবীর ১০ ভাগ সরকারের হাতেও তা নেই। ভারত কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার প্রধান ইচ্ছা করলেও তারা নির্বাচনকালীন কিছুই করতে পারে না। বাংলাদেশে একজন রিটার্নিং অফিসারও পাওয়া যাবে না যার কাছে ভারতের মতো ২ মাস ব্যালট বাক্স রাখা যাবে।

ড. আকবর আরো বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশে গত এক দশকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে প্রকাশ্যে আলোচনায় কোনো পক্ষই ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে পর্দার আড়ালে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।

তাই আশা রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করা উচিত। সেই সুদিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।

আয়োজক সংগঠন ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

কিরণ বলেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। যা সময়ের দাবি ও জনগণের প্রত্যাশা। বিএনপিসহ তার জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তাই আগামী নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন তৈরি না হয় তার জন্য একটা গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকা অথবা ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষে পরস্পরবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে। যে কারণে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাব দেখা দিচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সরকার দলের পক্ষে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। আর বিরোধী দলের পক্ষে অংশ নেয় প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি। প্রতিযোগিতা শেষে বিচারকদের ও উপস্থিত দর্শকদের মতামতে জয়লাভ করে বিরোধীদল।

এসময় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং সহযোগী অধ্যাপক রোকেয়া পারভীন জুই।



মন্তব্য চালু নেই