সীমান্তে হত্যা ও চোরাচালান বন্ধে কাঁটাতারের বেড়া চায় বিজিবি

হত্যা ও চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৯৫০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অনুমতি ও বাজেট চেয়েছে বিজিবি। সরকারের পক্ষ থেকে থেকেও মিলেছে সবুজ সংকেত। খুব শিগগিরই নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।

বিজিবি জানিয়েছে, ভারতের নয়া দিল্লীতে বিজিবি ও বিএসএফ মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হতে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন ২২ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। বিএসএফের পক্ষ থেকে ২৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল সীমান্ত হত্যা ও চোরাচালান।

চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশের ২৬ জন নাগরিক নিহত হন। একই সময়ে গরু চোরাচালানীদের হাতে তিনজন নিহত ও আহত হন ১৫৭ জন। ছয় ভারতীয় চোরাচালানিও নিহত হন। ভারতে সীমান্ত সম্মেলন যখন চলছিল তখনও বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে ৪ জন বাংলাদেশি নিহত হন।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, আত্মরক্ষার্থে গুলি বিনিময়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নন লেথাল উইপেন (মরণাস্ত্র নয়) ব্যবহার করার পরেও বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যুর জোর প্রতিবাদও করেছে বিজিবি।

বিজিবি বলছে, সীমান্তে হত্যা ও চোরাচালান বন্ধে তদন্তের অনুমতি নেই বিজিবি’র। চোরাচালানিদের ধরে বিজিবি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, শুল্ক বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে দিলেও তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বিজিবির হাতে নেই। সে কারণে বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান।

বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্তে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও চোরাচালান বন্ধে বিজিবির রয়েছে সীমাবদ্ধতা। ভারতের যেখানে সীমান্তে ৭৯% কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছুই নেই। চলতি বছরে সীমান্তে নিরাপত্তা ও প্রহরা বাড়ানোর জন্য বিওপি’র সংখ্যা বাড়ানো হলেও কাঁটাতারের বেড়া বাড়েনি এক কিলোমিটারও। মূলত, যেসব স্থান দিয়ে চোরাচালান হয় ও হত্যকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেসব স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিজিবি।

বিজিবি বলছে, ৯৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে সম্মতিও দিয়েছেন। প্রথম ধাপে ২৮২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাজ হবে। এই ২৮২ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মিত হবে ছোট ছোট বাজেট অর্থায়নে।

এ ব্যাপারে বিজিবির মহাপরিচালিক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্ত হয়ে প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসছে। সম্প্রতি ভারত থেকেও ইয়াবা আসার সংবাদও মিলছে। ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে গরুসহ নানা চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে ইয়াবা আসার বিষয়টি আরো বেশি উদ্যোগজনক। ডিজি বলেন, সীমান্ত হত্যার ৯৫ শতাংশই গরু চোরাচালানের কারণে।

তিনি আরো বলেন, বিষয়গুলো আমরা বিবেচনায় নিয়ে চোরাচালান বন্ধে দরকার সীমান্তে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাঁটাতার নির্মাণ করা। আমরা তিন বছর আগেও সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। সে প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে ২৮২ কিলোমিটার কাঁটাতার নির্মাণের অনুমতি পেয়েছি। ইয়াবার চালান বন্ধে টেকনাফ থেকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বাজেট পেলেই সে কাজ শুরু হবে।



মন্তব্য চালু নেই