সিলেটে মহৎ অধ্যক্ষের একী কাণ্ড!

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মদন মোহন কলেজের এক এইচএসসি পরিক্ষার্থীকে হাতেনাতে নকল ধরার পর অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ ওই পরিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করে পুনরায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে মদন মোহন কলেজের ৪৩০১নং রুমে এ ঘটনা ঘটে। পরে কর্তব্যরত শিক্ষক ওই পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে নকল উদ্ধার করে অধ্যক্ষ আবুল ফাতেহ ফত্তার কাছে নিয়ে যান। তখন অধ্যক্ষ পরিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করে উল্টো তাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেন। কলেজ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে এইচএসসি ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর পর মদন মোহন কলেজ কেন্দ্রের ৪৩০১ নম্বর কক্ষে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করেন ওই কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম। তিনি এক প্রাইভেট পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যান। শিক্ষক আবুল কাশেম হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রকে নকল করতে ধরেন হলের দায়িত্বরত শিক্ষকরা। ছাত্রের প্রশ্নপত্রে উত্তর লেখা দেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন শিক্ষকরা। একপর্যায়ে ওই ছাত্র জানায় শিক্ষক আবুল কাশেম তাকে উত্তর লেখা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে গেছেন। এরপর উত্তর লেখা প্রশ্নপত্রসহ ওই ছাত্রকে নিয়ে যাওয়া হয় অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহর কাছে। অধ্যক্ষের সামনেও ছাত্রটি নকল সরবরাহকারী হিসেবে শিক্ষক আবুল কাশেমের নাম বলে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়নি।এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষক আবুল কাশেমকে পরীক্ষার ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেন অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। তাকে পরবর্তী কোনো পরীক্ষার ডিউটি না করারও নিদের্শ দেন তিনি। এ নির্দেশের কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলেই শিক্ষক আবুল কাশেমকে পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহর সঙ্গে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথম রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। ছাত্রের কাছ থেকে উদ্ধার করা প্রশ্নে যে হাতের লেখা রয়েছে তা পরীক্ষা করলেই প্রমাণ হবে এ হাতের লেখা আমার নয়। নকলসহ আটকের পর ওই পরীক্ষার্থী আমার নামও বলেনি। কলেজের কিছু শিক্ষক আমাকে বেকায়দায় ফেলতে এ ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করছেন।’
উল্লেখ, গত বছর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মদন মোহন কলেজের শিক্ষকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ ওই কলেজের শিক্ষকদের সহযোগিতায় ছাত্র সংগঠনগুলো বিনা টাকায় ছাত্রভর্তি করায়। পরে অর্থমন্ত্রী কলেজে কমিটি ও শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিলেটের একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘সকল ছাত্রনেতারাই বদমাইশ’।
গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ‘রাতারগুল জলাবনের ভবিষ্যৎ’ বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘ছাত্রনেতারা ছাত্রদের ফি থেকে কমিশন খায়। ২০১৩ সালে মদন মোহন কলেজে ভর্তি ১৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪০০ জনের ফি কলেজ পেয়েছিল। বাকি টাকা ছাত্রনেতারা খেয়ে ফেলেছে। সব দলের ছাত্রনেতারাই এসব টাকার ভাগবাটোয়ারা পায়। অথচ কলেজের শিক্ষকদের বেতন দেয়া যাচ্ছে না।’



মন্তব্য চালু নেই