সিলেটে থেমে থেমে সংঘর্ষ, গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলকে ঘিরে চলছে জঙ্গিবিরোধী অভিযান। রবিবার (২৬ মার্চ) ভোর থেকে সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওই ভবনের ভেতর থেকে জঙ্গিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ছে।
অভিযানস্থল এবং এর আশপাশের এলাকা পুরোপুরি কর্ডন করে রেখেছে সেনাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া শনিবার রাতে বোমা বিস্ফোরণস্থল সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ফিতা টানিয়ে সুরক্ষিত করে রেখেছে।
শনিবার (২৫ মার্চ) রাতের বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দু’দফা বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়সার। তারা দু’জনই পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্য ছিলেন বলে জানান জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন।
অপর নিহতরা হলেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফাহিম, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু ও নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম। অপর একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
সিলেট মেট্রোপলিটনের পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ২ পুলিশসহ ৬ জন নিহত হওয়ার খবর আমরা নিশ্চিত হয়েছি। গুরুতর আহত ২জনকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) গভীর রাতে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে ওই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর তা ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর প্রায় ৩০ ঘণ্টা সেখানে পাহারা বসিয়ে শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে পুলিশের সহায়তায় অভিযান শুরু করেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। বাড়িটিতে জিম্মি দশায় থাকা ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হলেও অভিযান এখনো শেষ হয়নি।
শনিবার সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের অদূরে অন্য একটি বাড়িতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তারা। এরপর সাংবাদিকসহ অন্যরা বের হয়ে সামনে এগোনোর সময় বোমা বিস্ফোরণের খবর আসে। দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে রোববার (২৬ মার্চ) সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২ পুলিশসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র্যাব সদস্যসহ ৩২ জন। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আতিয়া মহল থেকে ৩০০ গজ উত্তরের রাস্তায় এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন, স্থানীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিক আজমল হোসেন (৩০), দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি হারুনুর রশিদ এবং উৎসুক জনতার মধ্যে রিমন, নাজিম, রাসেল, ওহেদুল, ইসলাম আহমেদ, নুরুল আলম, বিপ্লব, হোসেন আবদুর রহিম, ফখরউদ্দিন, মামুন, রহীম, মোস্তাক, ফারুক মিয়া, সালাহউদ্দীনসহ ও কয়েকজন পথচারী রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, যৌথ বাহিনীর ব্রিফিং শেষে সবাই ওই রাস্তা ধরে ফেরার সময় প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। সে সময় র্যাব-পুলিশ সদস্যরা অন্য একটি অবিস্ফোরিত বোমা দেখতে পান। নিরাপদ দূরত্বে সরানোর সময় ওই বোমাটিও বিস্ফোরিত হওয়ায় আহতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।
শনিবার সকালে লে. কর্নেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ নামে অভিযানটি শুরু হয়। এরপর ৭৮ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে উদ্ধারের খবর জানিয়ে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান ব্রিফিংয়ে জানান, তারা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।
পুলিশের ধারণা, ‘মর্জিনা’ নামে কোড ব্যবহার করে ওই বাড়িটিতে অবস্থান নিয়েছেন জঙ্গিরা। ভেতরে নব্য জেএমবি নেতা মুছা থাকতে পারেন বলেও ধারণা করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মন্তব্য চালু নেই