আইএসের দায় স্বীকার, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানার পাশে পরপর দুইটি বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব ঘটনায় পুলিশসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। এক সেনা কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা ও সিলেটে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিক, জঙ্গিবিরোধী ওই অভিযানের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ এর বরাত দিয়ে রাতেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই পৃথক বিস্ফারণে র‌্যাব-পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও উৎসুক জনতাসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ছয়জনের অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা ও সাড়ে ৭টায় দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম বোমাটি জঙ্গিদের হামলার মাধ্যমে ঢাকা-ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়কের গোটাটিকর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে বিস্ফোরিত হয় এবং দ্বিতীয়টি উদ্ধারের সময় বিস্ফোরিত হয়।

শনিবার রাত ১১টা পৃর্যন্ত পুলিশের আদালত পরিদর্শক (সিএসআই), চৌধুরী আবু মো. কয়ছর, ঝালোপাড়া এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী অহিদুল ইসলাম অপু, সিলেট নগরের জল্লারপারের দাড়িয়াপাড়া এলাকার প্রাইম লাইটিং অ্যান্ড ডেকোরেটার্সের মালিক শহিদুল ইসলাম এবং ৩৫ বছরের এক অজ্ঞাত যুবকসহ মোট ৪ নিহত হন। এর মধ্যে অপু ও কয়ছর ঘটনাস্থলে এবং অপর দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সর্বশেষ রাত আড়াইটার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজেছাত্র ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহিম মারা যান। এনিয়ে নিহতের সংখ্যা ছয়ে দাড়ালো।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছেন।

নিহত ফাহিমের চাচা আশরাফ জানান, সন্ধ্যায় বোমা হামলায় আহত হওয়ার পর ফাহিমকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে হওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় এবং প্রয়োজনীয় রক্ত দেয়া হয়। কিন্তু রাত ১টার দিকে ফাহিম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

আহতদের মধ্যে জালালাবাদ সেনানিবাসের বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ ও মেজর আজাদ ও দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের ওসি হারুনুর রশিদ রয়েছেন। এদের মধ্যে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শনিবার রাতেই সেনাবাহিনীর হেলিকাপ্টারে করে ঢাকার সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিস্ফোরণে আহত আরও ১৭ জন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তারা হলেন- ফটো সাংবাদিক আজমল আলী, মোস্তাক আহমেদ, নাজিমউদ্দিন, রোমেল আহমেদ, ইসলাম আহমেদ, নুরুল আলম, বিপ্লব হোসেন, আব্দুর রহিম, আবদুস সত্তার, রাহিম মিয়া, হোসেন আহমেদ, মামুন আহমেদ, ফারুক মিয়া, সালাউদ্দিন শিপার, গুলজার আহমেদ, রিমন আহমেদ ও রাসেল আহমদ। অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলে দুই দিন ধরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। `অপারেশন টোয়াইলাইট` নামের এ অভিযান পরিচালনা করছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার পাঠানপাড়া সড়কের পাশে অবস্থিত পাঁচতলা বিশিষ্ট দুটি ভবনের নাম আতিয়া মহল। সিলেট নগরের আতিয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির বান্দরঘাটের বাসিন্দা সাবেক সরকারি কর্মচারী উস্তার মিয়া ওই ভবনের মালিক।

ওই ভবনের নিচ তলায় জঙ্গিরা আস্তানা করেছে এমন সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। শুক্রবার দিনভর পুলিশ, সোয়াট ও সেনাসদস্যরা বাড়িটিকে ঘিরে রাখেন। এসময় হ্যান্ডমাইকে করে বার বার সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। তবে এতে সাড়া মিলেনি।

অবশেষে বাড়িটি ঘিরে রাখার প্রায় ত্রিশ ঘন্টা পর শনিবার সকালে চূড়ান্ত অভিযান ‘টোয়াইলাইট’ শুরু করেন সেনা সদস্যরা। রোববার সাড়ে সকাল সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযান চালাচ্ছেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।



মন্তব্য চালু নেই