সিরিয়ায় নিহত বাংলাদেশি আইএস জঙ্গি সুজনের স্ত্রী-শ্যালিকা ৪ বছর ধরে নিখোঁজ
লিটন হায়দার ও গোলাম মুজতবা ধ্রুব : জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ঘরছাড়া অর্ধ-শতাধিকের তথ্য আসার পর গোপালগঞ্জের দুই বোনের নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে, যাদের একজনের স্বামী সিরিয়ায় আইএসবিরোধী হামলায় নিহত হয়েছেন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের করফা গ্রামের প্রয়াত ছোলেমান শেখের মেয়ে সায়মা আক্তার মুক্তা ও রাবেয়া আক্তার টুম্পা স্বামী-সন্তানসহ কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ বলে সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে।
মুক্তা ও টুম্পার বিয়ে হয়েছিল খুলনার পাকুড়তিয়া গ্রামের একেএম আবুল হাসনাতের দুই ছেলে সাইফুল হক সুজন ও শরীফুল হক ইমনের সঙ্গে।
এদের মধ্যে মুক্তার স্বামী সুজন ২০১৫ সালে সিরিয়ায় আইএসের আস্তানায় বিমান হামলায় নিহত হন বলে টুঙ্গীপাড়া থানার ওসি মো. মাহমুদুল হক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মুক্তার স্বামী সাইফুল হক সুজন সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলায় ২০১৫ সালের দিকে মারা যান। ওই সময় তিনি আইএস ঘাঁটিতে ছিলেন।”
এ ঘটনার পর জঙ্গি অর্থায়নে সহযোগিতার অভিযোগে ঢাকার কারওয়ানবাজার থেকে সুজন-ইমনের বাবা হাসনাতকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তিনি এখনও কারাগারে আছেন বলে ওসি মাহমুদুল জানিয়েছেন।
মুক্তা ও টুম্পার সঙ্গে টুঙ্গীপাড়ায় তাদের বাবার বাড়ি করফা এবং শ্বশুরবাড়ি খুলনার পাকুড়তিয়া গ্রামের কোনো যোগাযোগ নেই বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সুজনের সর্বশেষ বাসার ঠিকানা ছিল খুলনার ইকবাল নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে এবং ইমনের সর্বশেষ ঠিকানা ছিল ঢাকার মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ১ নম্বর গেটের পাশে। তবে ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ করেও দুজনের কোনো আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিকে বুধবার মুক্তা ও টুম্পার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গীপাড়ার করফা গ্রামে গিয়ে তাদের পরিবারের কারো সন্ধান মেলেনি। ওই বাড়িতে তাদের দূর সম্পর্কের চাচা আসাদ শেখ ও তার স্ত্রী বিউটি বেগম সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন।
বিউটি বলেন, ছোলেমান শেখের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। ছোলেমান খুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। সেখানেই তার মেয়েরা বড় হয়েছে, বিয়ে করেছে।
খুলনার পাকুড়তিয়া গ্রামের বাসিন্দা বায়জিত মিয়া বলেন, এই গ্রামের আবুল হাসনাতের ছেলে ও সাইমা আক্তার মুক্তার স্বামী সাইফুল হক সুজন গত বছর সিরিয়ায় আইএসের আস্তানায় রুশ হামলায় নিহত হয়েছিল বলে এলাকার সবাই জানে।
মুক্তা ও টুম্পার বাবা ছোলেমান ১৫ বছর আগে করফায় মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য দুই বিঘা জমি দিয়েছিলেন বলে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান।
করফা সামসুল উলুম খাদেমুল ইসলাম নামের মাদ্রসাটির পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের হাওলাদার বলেন, “ছোলেমানের ছেলে মেয়েরা জঙ্গি কি না তা নিশ্চিত নই। তবে লোকজনের কাছে শুনেছি তার এক মেয়ের জামাই সিরিয়ায় মারা গেছে। মুক্তা ও টুম্পা স্বামীর হাত ধরে সিরিয়ায় যেতে পারে।”
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ওই সূত্র বলছে, এই দুই বোন তাদের স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে সিরিয়ায় যান সবাই। সেখানেই আইএসবিরোধী হামলায় মারা পড়েন সুজন। তবে মুক্তা ও টুম্পা এখন সিরিয়া না বাংলাদেশে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। -বিডিনিউজ
মন্তব্য চালু নেই