সিটিং হলো লোকাল, তবুও কমলো না ভাড়া

চিটাগাং রোড থেকে সাভারের কালামপুর পর্যন্ত চলাচলকারী ‘ঠিকানা এক্সপ্রেস’ পরিবহনটি আগের দিনও চলেছে সিটিং হিসেবে। রবিবার সকাল থেকে বাসটি হয়েছে লোকাল। তবে ভাড়া কমেনি এক টাকাও। সাইনবোর্ড থেকে কালামপুর পর্যন্ত তারা ভাড়া রাখছে ৫৪ টাকা। পথে পথে যাত্রী ওঠা-নামা করেছে তারা।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বড় বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা, আর মিনিবাসের পাঁচ টাকা। কিন্তু এই বাসটি প্রতিটি স্টপেজে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করছে সাত টাকা।

জানতে চাইলে এই পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিপন বলেন, ‘আমরা বিআরটিএর চার্ট অনুয়ায়ী ভাড়া নিচ্ছি। সিটিং বাদ দেয়ায় আগের চেয়ে এখন আমরা দ্বিগুণ যাত্রী তুলতে পারব। আমাদের ইনকামও আগের চেয়ে বেশি হবে। আমরা যাত্রীদের সুবিধায় সিটিং সার্ভিস করেছিলাম। এখন এ সার্ভিস উঠিয়ে নিলে আমাদের করার কিছু নেই।’

নানা সমালোচনার পর ‘পকেট কাটা’র সিটিং সার্ভিস ১৫ এপ্রিল থেকে বন্ধের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন পরিবহন মালিকরা। কিন্তু কথা রাখেননি তারা। পরে সেদিন বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠক বসে মালিক সমিতির। আর কথা হয়, রবিবার থেকে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।

এই অভিযান চলাকালে সিটিং হিসেবে চলা বাসগুলো লোকাল হিসেবে চলাচল করতে দেখা গেলেও ভাড়ার হিসাবে গোলমাল দেখা গেছে। সিটিং থেকে লোকাল করলেও বেশ কিছু বাসের ভাড়া আগের মতোই নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এতে ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে কথা হচ্ছে। বেসরকারি চাকরিজীবী ঝুমা রহমান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, “সরকার ঘোষিত সিটিং লোকাল বাসে উঠসি। সিটিং আর তেমন সিটিং কই ছিল, আর এখন তো সরকারি সিদ্ধান্ত। বোঝ অবস্থা। ভাড়া আবার সিটিংই নিল। এই ব্যাপারে জানতে গেলে কন্ট্রাক্টর, ড্রাইভার ভাবের সহিত বলে, ‘এই ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয় নাই’।” ঝুমা আরো লেখেন, “কী দরকার ছিল নাচুনি বুড়িরে ঢোলের বাড়ি দেয়ার।”
খিলক্ষেত থেকে বনানী পর্যন্ত চলাচলকারী ‘ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিস’ গতকাল পর্যন্ত চলেছে সিটিং হিসেবে। আজ যাত্রী তুলেছে আসনের অতিরিক্ত। কিন্তু তারা ভাড়া নিচ্ছে আগের মতোই ১০ টাকা করে।

‘শতাব্দী’ পরিবহনে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ভাড়া আগের দিনের মতোই ২০ টাকা দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় চলাচলকারী বড় বাসে ভাড়া কিলোমিটার প্রতি এক টাকা ৭০ পয়সা আর মিনিবাসে এক টাকা ৬০ পয়সা করা হয়। বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা ও মিনিবাসে পাঁচ টাকা নির্ধারণ করে বিআরটিএ। ৩১টি আসন থাকলে তা মিনিবাস এবং এর চেয়ে বেশি হলে তা বড় বাস হিসেবে বিবেচিত হবে।

বেড়েছে ভোগান্তি

লোকাল হিসেবে চলার শুরুর পর থেকেই বাসগুলো গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়া শুরু করে। এতে বিপাকে পড়ে বিশেষ করে নারীরা।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে দুই নারী যাত্রী ধানমন্ডির ল্যাব এইডের সামনে থেকে কাকলী যাবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তারা কোনো বাসে উঠতে পারছিলেন না। এরপর তাদের দেখা যায় অন্য এক যাত্রীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে অটোরিকশা ভাড়া করতে। ওই যাত্রী যাবেন বিশ্বরোড। একজন তরুণী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগে ৫০ টাকায় ভালোভাবেই চলে যেতাম বিশ্বরোড। এখন কীভাবে যাব? প্রতিদিন তো সিএনজিতে চলাচল করা সম্ভব নয়।’

প্রথম দিনের অভিযান

রবিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর পাঁচটি পয়েন্টে অভিযান চালায় বিআরটিএ। এর মধ্যে আসাদগেট এলাকায় অভিযানে ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিউর রহমানও। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেই। যত দিন এ সমস্যা শেষ না হয় সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। প্রথম দিনে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি।’

এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোহরা খাতুন। অভিযান শেষ হয় দুপুর দেড়টার দিকে। তিনি বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ২২টি মামলা করেছি এবং ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’

সড়ক প‌রিবহন মা‌লিক স‌মি‌তির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহও সেখানে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে কোনো সিটিং সার্ভিস, গেইট লক, বিরতিহীন কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামের কোনো গণপরিবহন থাকবে না। সব বিআরটিএর চার্ট অনুযায়ী চলবে। আমরা প্রতিটি মালিককে বলেছি লোকাল চালাতে। এর পরও যারা চালাবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



মন্তব্য চালু নেই